তিন বছর পর বিদেশি ঋণ অস্বস্তিকর অবস্থায় যাবে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করা অযৌক্তিক বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তবে তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পর বাংলাদেশ বিদেশি দায়দেনায় অস্বস্তিকর অবস্থানে চলে যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ স্বস্তিকর (সবুজ) অবস্থানে আছে। এটি ধীরে ধীরে হলুদ অবস্থানে (অস্বস্তিকর) যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতকাল সোমবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সরকারি দায়দেনা’ শীর্ষক আলাপচারিতায় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ সতর্কবার্তা দেন। ভার্চুয়ালি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, একেকটি দেশ একেক রকম বিকশিত হয়। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশকে মেলানো যৌক্তিক নয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখন আমরা বিদেশি দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে বেশি মূল্যে বেশি ঋণ নিচ্ছি। যেমন—চীন, রাশিয়া ও ভারত। এসব দেশের ঋণের রেয়াতি সময় (গ্রেস পিরিয়ড) শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সরবরাহকারী ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। ’
তাঁর মতে, বহুপক্ষীয় উৎসর বদলে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে বেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে। অথচ পাইপলাইনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো সাশ্রয়ী ঋণ পড়ে আছে। ব্যবহার করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশে এ মুহূর্তে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৪৩২ ডলার বা ৩৭ হাজার ৫৮৪ টাকা বলে জানান দেবপ্রিয়। আইএমএফের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়দেনার পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩৪.০৭ শতাংশ। আর ২০২১ সালে তা হয় ১৩১.১৪ বিলিয়ন ডলার। আর গত তিন বছরে গড় হিসাবে দায়দেনা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ বিলিয়ন করে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, হিসাবে বাংলাদেশের ঋণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় কম হলেও ২০১৮ সালের পর থেকে দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সার্বিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়দেনা বৃদ্ধির হার ছিল ৪৪.১ শতাংশ। দায়দেনা পরিস্থিতি চলমান দশকে দেড় গুণ বেড়ে গেছে। এ মুহূর্তে মাথাপিছু ঋণ হিসাব করলে তা ৪৩২ ডলারে দাঁড়ায়।
দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর ১০ বিলিয়ন ডলার করে দায়দেনা বাড়াচ্ছি। ০.৭ বিলিয়ন ডলার করে প্রতিবছর দেনা পরিশোধ করতে ব্যয় করতে হচ্ছে। দায়দেনা অনেক বেশি হারে বাড়ছে। ’
অভ্যন্তরীণ ঋণ বৃদ্ধির হার খুবই বেশি উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমানে দেশে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৬৯ বিলিয়ন ডলার। গত এক দশকে ওই দেনা বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের পর এই বৃদ্ধির হার ১৫ থেকে ১৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। অন্যদিকে বৈদেশিক দায়দেনার পরিমাণ ৬০.১৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক দায়দেনা ১৬.৬ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪.৭ থেকে ১৬.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূল প্রবন্ধে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ঋণের সুদ পরিশোধের হিসাব করলে দেখা যায়, ২০০৬ সালে বৈদেশিক সুদ পরিশোধ করা লাগত ৩৮.৯১ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ ৬১.০৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের পর ঋণ বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এসে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়েছে ৬৭.৬৫ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৩২.৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। এর কারণ হলো ক্রমাগত উচ্চ সুদে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হচ্ছে।