দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমায়
বুধবার থেকেই প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে তাবলিগ জামাতের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে আসছেন দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা। তাবলিগ জামাতের অনুসারী দেশ-বিদেশের মুসল্লির কাফেলা এখন তুরাগতীরে। প্রস্তুত টঙ্গীর তুরাগ নদ তীরের ইজতেমা ময়দান।
ইজতেমা উপলক্ষে মাঠের সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি। দলে দলে তারা ছুটছেন, আশ্রয় নিচ্ছেন ১৬৫ একর জমির ওপর তৈরি বিশাল শামিয়ানার নিচে।
শুক্রবার থেকে ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ান শুরু হয়েছে। প্রায় সব জেলার জিম্মাদাররা টঙ্গীর ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। জেলা জিম্মাদারদের উদ্দেশে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনাও চলছে। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের আয়োজনে এই পর্ব সমাপ্ত হবে। জোবায়েরপন্থিদের মধ্যে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ রয়েছে। প্রথম পর্ব শেষে চার দিন বিরতির পর ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে ভারতের বিশ্ব তাবলিগ মারকাজের সাবেক আমির মাওলানা সাদ কান্দলভীর অনুসারীদের আয়োজনে দ্বিতীয় পর্ব।
বুধবার থেকেই ইজতেমা ময়দানে দলে দলে আসতে শুরু করেছেন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি। অবশ্য এর আগেই শীর্ষ মুরব্বিরা ময়দানে চলে আসেন। ইজতেমার প্রথম পর্বের গণমাধ্যমবিষয়ক সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম সমকালকে বলেন, ১০-১২ হাজার বিদেশি মেহমান এবার ইজতেমায় অংশ নেবেন। তাদের বেশির ভাগই চলে এসেছেন। তাদের জন্য ময়দানের উত্তর-পশ্চিম দিকে আন্তর্জাতিক নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মুসল্লির সংখ্যা বাড়ায় এবার তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে তিন একর জমিতে ছাউনি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তিন দিনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন জামাতের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। ৬৪ জেলার জমায়েতবদ্ধ মুসল্লি ছাড়াও ব্যক্তিগত ও স্থানীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নেবেন।
এদিকে, স্থানীয় সাংসদ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিদিনই ইজতেমা ময়দানে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন; কাজের তদারকি করছেন। ময়দান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজেও অংশ নিয়েছেন। তিনি জানান, ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুসল্লিরা যাতে কোনও ভোগান্তির শিকার না হন, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়েছে। গাজীপুর সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মুসল্লির সংখ্যা বেশি হবে। সেদিক বিবেচনা করেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দু পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং রাস্তার ওপর রাখা গাড়ি সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তুরাগ নদে নিরাপত্তার জন্য টঙ্গী ব্রিজ ও কামারপাড়া ব্রিজের নিচে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার জন্য বাঁশের তিনটি নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে। মুসল্লিদের চিকিৎসার জন্য ৪৫টি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, এবার ইজতেমায় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৯ হাজার পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার ১০ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহর বলেন, মুসল্লিরা যাতে নির্বিঘ্নে ইজতেমা ময়দানে আসতে এবং বাড়ি ফিরতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ কাজ করছে।