ধর্ষণের সংজ্ঞা বদলাতে সুইজারল্যান্ডে ভোটাভুটি
ধর্ষণ শুধু তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা নয়। এটি মহামারির মতো গ্রাস করছে গোটা বিশ্বকেই। এই পরিস্থিতে ধর্ষণের নতুন সংজ্ঞা খুঁজছে সুইজারল্যান্ড, সামনে এসেছে একাধিক প্রশ্ন। সোমবার ধর্ষণের নতুন সংজ্ঞা খুঁজতে ভোটাভুটি হয় আল্পস পর্বতমালার বুকে অবস্থিত দেশটির সংসদে।
এএফপি অনুসারে, সুইজারল্যান্ডে জোর করে যৌন সম্পর্ক করা হলে তা ধর্ষণ বলে গণ্য করা হয়। সঙ্গে নির্যাতিতা আদৌ বাধা দেওয়ার কোনো চেষ্টা করেছিলেন কি না তাও বিচার্য হয়।
তবে সময়ের সঙ্গে এই সংজ্ঞা বদলের জোরালো দাবি উঠেছে ইউরোপের শান্তিপূর্ণ দেশটিতে। অনেকেই বলছেন, অসম্মতিতে হওয়া যেকোনো ধরনের যৌন সম্পর্ককেই ধর্ষণের পর্যায়ে ফেলতে হবে। এবং নতুন আইন কোনোভাবেই লিঙ্গকেন্দ্রিক হবে না। অর্থাৎ ধর্ষণের দায়ে কেবল পুরুষ নয়, নারীদেরও কাঠগড়ায় তোলা হবে।
আইনের মাপকাঠিতে কোন যৌন অপরাধকে কখন ধর্ষণ আখ্যা দেওয়া হবে সেই প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে সোমবার ভোটগ্রহণ হয় সুইস সংসদের নিম্নকক্ষে। যেখানে ‘নো মিনস নো’র পাশাপাশি ভোটদাতাদের কাছে অন্যতম বিকল্প ছিল ‘অনলি ইয়েস মিনস ইয়েস’। এই ভোটে সব সম্মতিহীন যৌন সম্পর্ককেই ধর্ষণ আখ্যা দেওয়ার পক্ষে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। যার পক্ষে ভোট পড়ে ৯৯টি এবং বিপক্ষে ৮৮টি। আর ভোটদান থেকে বিরত থেকেছেন তিনজন।
এদিন সংসদে বিতর্কের পারদ চড়েছে অনেকটাই। সোশ্যালিস্ট দলের সংসদ সদস্য তামারা ফুনিসিয়েলো বলেন, ‘এটা জানা কথা যে প্রতিবেশীর মানিব্যাগ থেকে টাকা তাকে না জিজ্ঞেস করে তো আর নেওয়া যায় না! কারো বাড়িতে ঢোকার আগে অবশ্যই কলিং বেল বাজিয়ে তবেই ঢুকতে হয়, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মতিকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। সেই অর্থে আমার বাড়িও আমার শরীরের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে!’ এই তর্কে সম্মতি জানিয়ে অন্য এক সদস্য রাফায়েল মাহেম বলেন, ‘কারো শরীর তো আর খোলা বার নয়!’
যদিও দক্ষিণপন্থী একাধিক সদস্যের দাবি, সম্মতির বিষয়টির সুক্ষ্ম বিচার করতে গেলে বিভ্রান্তি আরো বাড়বে এবং লাভের লাভ অধরাই থেকে যাবে। এর আগেই ‘কাউন্সিল অব স্টেটস’ অর্থাৎ উচ্চকক্ষের সদস্যরা এ নিয়ে তাদের মত জানিয়েছিলেন। এবার দুই কক্ষকেই বিষয়টি নিয়ে একমত হতে হবে। এ ছাড়াও সরাসরি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার সুবাদে এ নিয়ে এরপর ভোটদান পর্বে অংশ নেবেন সুইজারল্যান্ডের সাধারণ মানুষ। তার পরই ধর্ষণ আইনে বদল ঘটানো যেতে পারে দেশটিতে।
উল্লেখ্য, ধর্ষণের ‘অনলি ইয়েস মিনস ইয়েস’ সংজ্ঞা ইউরোপের একাধিক দেশ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে স্পেন, ডেনমার্ক, সুইডেন ও বেলজিয়াম। এবার একই পথে হাঁটতে চলেছে সুইজারল্যান্ডও।
সংবাদ প্রতিদিন, আনন্দবাজার পত্রিকা