নিউইয়র্কে ননসিটিজেনদের স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার আদায়ের লড়াই
নিউইয়র্কে গ্রিনকার্ডধারী ও ওয়ার্ক অথরাইজেশন রয়েছে এমন বাসিন্দারা যেন আগামীতে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে নিউইয়র্ক প্রশাসন। রড্রিগজ্ ইতোমধ্যে প্রস্তাব করেছেন গ্রীনকার্ডধারী ও ওয়ার্ক অথরাইজেশন রয়েছে এমন অভিবাসীদের ভোটার রাইট দেওয়ার জন্য। ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সিটি কাউন্সিলে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সিটি কাউন্সিলম্যান ইয়েদানসি রড্রিগজ্ বলেছেন, একজন ইমিগ্র্যান্ট নিউইয়র্ক সিটিতে যেন মিউনিসিপ্যাল ইলেকশনে ভোট দিতে পারেন। যারা এখানে আইনীভাবে বৈধ অভিববাসী, গ্রিনকার্ড রয়েছে ও ওয়ার্ক অথরাইজেশন রয়েছে তারা ভোট দিতে পারবেন। নিউইয়র্কে প্রায় এক মিলিয়ন লোক যারা বৈধ রেসিডেন্স কিন্তু তারা লোকাল ইলেকশনে ভোট দিতে পারেন না। কারণ তারা সিটিজেন নন। তারা সিসিটজেন না হলে তারা এখানে নিয়মিত ট্যাক্স দিচ্ছেন ও তারা বিভিন্ন খাতে ইনভেস্ট করছেন। ও নিউইয়র্কে বিভিন্নভাবে তারা অবদান রাখছেন।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এটা গুরুত্বপূর্ণ যে তাদেরকে এক একজনকে গণনায় ধরা দরকার ও ভোট দিতে সুবিধা দেওয়া দরকার। কারণ তারা নিউইয়র্কে বসবাস করেন ও রিয়েল ডেমক্রেসির জন্য তারা মিউনিসিপ্যালটির নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, অনেকেই আছেন এখানে ১৯৮৩ সালে প্রথম এই দেশে এসেছেন। তারা গ্রিনকার্ড হোল্ডার। তিনি ২০০০ সালে সিটিজেনশিপ লাভ করতেন। কিন্তু তিনি সিটিজেনশিপ নেন নি।
নিউইয়র্ক কাউন্সিলম্যান স্থানীয় নির্বাচনে নন-সিটিজেনদের ভোটাধিকার দেওয়ার প্রচেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেন। এমন কিছু অভিবাসী যারা মার্কিন নাগরিক নন, তাদের ভোটাধিকারের সম্প্রসারণ করবে এমন একটি বিল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে পেশ করা হয়েছিল।
ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের অভিবাসী সিটি কাউন্সিলম্যান ইয়েদানসি রড্রিগজ্ এই আইনটির পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, যা নিউ ইয়র্কবাসীদের যারা আইনী স্থায়ী বাসিন্দা বা কাজের অনুমোদন প্রাপ্ত তাদের পৌর নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার প্রদান করবে।
ট্যাক্স প্রদান করা এবং নগরীতে বিনিয়োগ করা এবং অবদান থাকা সত্ত্বেও রড্রিগজ-এর অফিস অনুযায়ী নাগরিক না হওয়ায় প্রায় এক মিলিয়ন নিউইয়র্ক সিটি বাসিন্দারা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।
‘আমি বিশ্বাস করি যে এই প্রক্রিয়ায় অমরা যাদের বাদ দিয়েছি তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি … তারা সত্যিকারের গণতন্ত্রে বেঁচে থাকার যোগ্য যেখানে তাদেরও পৌর নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে’ বলেছেন রড্রিগজ্।
বিষয়টি রড্রিগজের ব্যক্তিগত মত, যিনি ১৯৮৩ সালে গ্রিন কার্ড নিয়ে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। ২০০০ সালে পুরো নাগরিকত্বের মর্যাদা লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। এর মধ্যে বছরগুলিতে, নিউইয়র্ক সিটির আইনজীবী বলেছেন, তিনি বাসন ধোয়ার কাজ করেছেন, একটি কারখানায় এবং ট্যাক্সি চালক হিসাবে, ট্যাক্সের মাধ্যমে নগরীতে অবদান রেখেছেন, তবে তিনি নাগরিকভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন নি।
যদিও বিলটি প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি এবারই এটি প্রথমবার নয় – ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে বিলটির প্রস্তাব করা হয়েছিল – রড্রিগজ্ সিএনএনকে বলেছিলেন যে এইবারের আগে এই আইন পরিষদটি পাস করবে বলে আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী তিনি, কারণ ইতিমধ্যে এটি কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেয়েছে। ৫১ টি সদস্যের কাউন্সিলে ৩০ জন কো-স্পন্সর রয়েছে।
রড্রিগজ্ বলেন, ‘আমরা এমন একটি সুযোগ পেয়েছি যেটি আমাদের শহরকে বৃহত্তর পৌরসভার রোল মডেল বানিয়ে দিতে পারে।
বিলের কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে একটি আবাসনের সর্বনিম্ন ৩০ দিনের আবাস এবং শহরের নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক পৌরসভা ভোটার নিবন্ধন ফর্ম তৈরি করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা নতুন ভোটারদের তালিকা পরিচালনা করবে যারা নন-সিটিজেনস্।
শরণার্থীদের পুনর্বাসন এবং মেক্সিকো ও আমেরিকার মধ্যে সীমানা প্রাচীর তৈরির জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অব্যাহত প্রচেষ্টা নিয়ে ইমিগ্রেশন ইস্যুগুলি জাতীয়ভাবে ফ্ল্যাশপয়েন্ট হিসাবে অব্যাহত থাকায় এই বিলটির ঘোষণাটি এল। ট্রাম্প বিনা প্রমাণে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে দিয়েছেন যে অনিবন্ধিত অভিবাসীরা ২০১৬ সালে অবৈধভাবে হিলারি ক্লিন্টনকে ভোট দিয়েছিল।
ননসিটিজেন ভোটিংয়ের ধারণা এবং অনুশীলন নতুন থেকে অনেক দূরে। যদিও ননসিটিজেনরা ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দিতে পারে না, কয়েকটি স্থানীয় বিচার বিভাগ কিছু ভোটাধিকার সরবরাহ করেছে সান ফ্রান্সিসকোতে, ননসিটিজেন – অনিবন্ধিত অভিবাসীসহ – স্থানীয় স্কুল বোর্ড নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। এবং মেরিল্যান্ডের বেশ কয়েকটি শহর ননসিটিজেনদের ভোটাধিকার প্রসারিত করেছে।
২০১৮ সালের হিসাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২২ মিলিয়নেরও বেশি আইনী ননসিটিজেন ছিল, যাদের মধ্যে ৮ লক্ষ নিউ ইয়র্ক সিটিতে বাস করে।
নিউইয়র্ক সিটির প্রচেষ্টার প্রশংসা করে ইউনাইটেড নেইবারহুড হাউজগুলোর নীতি ও অ্যাডভোকেসির পরিচালক নোরা মুরান নিউইয়র্ক সিটির নিম্ন ভোটারের সংখ্যার উদ্ধৃতি দিয়ে এই ভোটদানের সম্ভাব্য প্রসঙ্গটি তুলে ধরেছিলেন।
মরান বলেছিলেন, ‘আমাদের নিউইয়র্কের ভোটারদের খুব কম হার রয়েছে এবং আমরা মনে করি যে যাই হোক না কেন আমরা অতিরিক্ত লোকদের ভোট প্রদানের পক্ষে – ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে, ভোটের গুরুত্ব বুঝতে পারি – এটি একটি ভালো বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি যে সময়টি আসবে, যে কেউ ভোটের জন্য যোগ্য সে তা করতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটিকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।’
নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্ল্যাসিও যদি এটি পাস এবং আইনে পরিণত করেন, তবে রড্রিগজের মতে, ২০২১ সালের নগরব্যাপী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম পরিবর্তনটি কার্যকর হবে। মেয়র, কমট্রোলার, পাবলিক অ্যাডভোকেট, পাঁচটি ব্যুরো প্রেসিডেন্ট এবং ৫১ টি কাউন্সিলের ৩৫ টি আসন সহ আগামী বছর নগরীর সমস্ত অফিস পুনরায় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে এই সব ভোটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
ভোট দেওয়ার জন্য অভিবাসীদের বিলের পৃষ্ঠপোষকতার মধ্যে কাউন্সিলম্যান ইয়েদানিস রড্রিগজকে সিটি হলে উপস্থিত জনতা দেখে আনন্দিত হন। অভিবাসী অধিকার সংস্থার সদস্যরা শহরব্যাপী জোট সিটি কাউন্সিলের সদস্যদের সাথে ‘আমাদের সিটি, আমাদের ভোট’ শুরুর জন্য সিটি কাউন্সিলের সদস্যদের যোগ দেন।
ইউনাইটেড নেবারহুড হাউসগুলি (ইউএনএইচ) এবং নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোলিশন (এনওয়াইসি) এই সংগঠন সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে অসংখ্য নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী লোকেরা আসেন ও অংশ নেন। যাদের মধ্যে অনেকে অভিবাসী যারা সম্প্রতি নাগরিক হয়েছেন এবং এখনও যারা নাগরিক হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
ইউএনএইচ পরিচালক বলেন, আমরা এই প্রচারের অংশ হতে পেরে গর্বিত এবং সিটি কাউন্সিলকে এই আইনটি পাস করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
এই বিলটি সিটি কাউন্সিলম্যান ইদানিস রড্রিগেজ প্রবর্তন করেছিলেন, ইমিগ্রেশনের চেয়ারম্যান কার্লোস মেনচ্যাকা এবং আরও ২৬ জন সহ-স্পনসর নিয়ে এটি প্রবর্তন করেছিলেন।
কাউন্সিলম্যান মেনচ্যাকা বলেন, ‘যে এই ধারণাটি কোনও নতুন ধারণা নয়, ১৭৭৬ থেকে ১৯০০ এর প্রথম দিকে, এটি একটি অধিকার যা অনেক অভিবাসীদের দেওয়া হয়েছিল। অ-নাগরিক অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে যে নতুন গণতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিল তাতে অংশ নিতে পেরেছিল। তাই আমরা আমাদের অভিবাসী সম্প্রদায়ের যারা ভোট দেওয়ার যোগ্য নন ও নাগরিক নন তাদের জন্য এই ক্ষমতাটি পুনরুদ্ধার করছি। এই বিলটি নিশ্চিত করবে যে হাফ মিলিয়ন থেকে এক মিলিয়ন নগরবাসী ভোট দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবেন।