নিউ ইয়র্কে স্বর্ণের দোকান কর্মচারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিক্ষোভ
৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ড্রাম এক বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে। বাংলাদেশী নারী নার্গিস ইসলাম অভিযোগ করেন জ্যাকসন হাইটসের সোনা চান্দি স্বর্ণের দোকান মালিক তাকে কম বেতন দেন। এমন কি যৌন হয়ারানিও করেন।
তার অভিযোগের ভিত্তিতে গেল ৮ মার্চ দুপুরে ৭৪ জ্যাকসন হাইটস স্ট্রিট সোনা চান্দি দোকানের সামনে মানবাধিকার সংগঠন ড্রাম ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
ড্রামের ওয়ার্কার আর্গনাইজার অনসুর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রায় শতাধিক নারী অংশগ্রহণ করেন। তারা সোনা চান্দি দোকানের সামনে প্রায় এক ঘন্টা নারী অধিকার, কর্মক্ষেত্রে নারী হয়রানিসহ সোনা চান্দির মালিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভ স্থলের আশেপাশের পথঘাট এবং গাছেও প্রতিবাদী স্লোগান লেখা পোস্টার ও ফেস্টুন সাঁটানো হয়।
পরে পুলিশ ডাকা হলেও বিক্ষোভের অনুমতি থাকার ফলে পুলিশ কোনও বাধা দেয় নি।
সোনা চান্দির মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বাংলাদেশী দেসিজ রাইজিং আপ মুভিং-এর (ড্রাম) একজন সদস্য নার্গিস ইসলাম জানান, তিনি একজন সিঙ্গেল মা। তার কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। গেল ৪ বছর ধরে তিনি সোনা চান্দিতে কাস্টমার সার্ভিস ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করছেন।
প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘন্টা কাজ করলে নার্গিস ইসলামকে ৫৫ থেকে ৭৫ ডলার দেওয়া হতো। কাজ করার সময়টাতে তাকে সোনা চান্দির মালিক দিলীপ মালানীর অসুস্থ মাকে দেখাশোনা করতে হতো, তাকে খাবার খাওয়াতে হতো এবং অন্যান্য সেবা করতেও বাধ্য হতেন তিনি। কিন্তু এসবের বিনিময়ে তাকে কোনও সম্মানী দেওয়া হতো না।
প্রতিদিন ভারি মালামাল নিয়ে প্রথম তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ওঠানামা করতে হতো। এর ফলে নার্গিস ইসলামের পায়ে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তার থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু দিলীপ মালানী তাকে কখনও ছুটি দেন নি।
নার্গিস আরও জানান, সোনা চান্দিতে প্রতিদিন ওভারটাইম করলেও দিলীপ মালানী কখনও ওভারটাইমের কোনও পারিশ্রামিক দেন নি।
তিনি অভিযোগ করেন, দিলীপ মালানি প্রায় রোজই নানাভাবে তাকে হেনস্থা করতেন, বাজে ব্যবহার করতেন, শরীর নিয়ে নোংরা ইঙ্গিত করতেন, এমন কি যৌন হয়রানি করতেন। নার্গিস এসবের প্রতিবাদ করেন বলে তাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছেন। অন্য কর্মচারী দিয়ে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছেন। তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে জোর করে বের করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দিলীপ মালানী একা নন আরও অনেক মালিক বা ব্যবসায়ী আছেন যারা তাদের মতো অভিবাসী নারী শ্রমিকদের নানাভাবে নির্যাতন করেন, অন্যায় করেন।
নার্গিস ইসলাম ওই বিক্ষোভে দাবী তুলে বলেন, সকল নারীকে সম্মান জানাতে হবে। কাগজপত্র বিবেচনা না করে তাদের যথাযথ সম্মানী/ বেতন দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হলে তার দায়িত্ব মালিকদের নিতে হবে। বাৎসরিক ভাতা/ বোনাস দিতে হবে।
তিনি এ সব অভিযোগ আমি লেবার ডিপার্টমেন্টকে জানিয়ে এবং মামলা করেছেন বলে জানান। নার্গিস ইসলামের মামলাটি পরিচালনা করেছেন ওয়ার্কাস রাটইস সুপারভাইজিং এটর্নী টিটো সিনহা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শামসুন নাহার ও সাবিতা। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নারী শ্রমিকরা স্লোগান দিতে দিতে এবং প্ল্যাকার্ড হাতে জ্যাকসন হাইটসের বিভিন্ন স্ট্রিট প্রদক্ষিণ করেন। ♦