নিউ ইয়র্ক বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বাড়ছে মামলা করার প্রবণতা
রূপসী বাংলা নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: নিউ ইয়র্ক বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সাংগঠনিক বিরোধ বা নেতৃত্বের কলহ থেকে মামলা করার প্রবণতা বাড়ছে। মসজিদ-মন্দির পরিচালনা কমিটি নিয়েও কমিউনিটিতে মামলা হচ্ছে। মামলার ফলে এসব সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কিন্তু কোনকিছুই মামলা করার প্রবণতা থেমে থামাতে পারছে না। ‘মামলা’ সৃষ্টি করছে প্রতিবন্ধকতা, গতি কমিয়ে দিচ্ছে, পথ অবরুদ্ধ করছে না। মামলা করে মামলাকারীরা সংগঠনকে আমূল বদলে দিতে পারছেন, তা নয়। যারা মামলাকে এড়িয়ে চলতে চাইছেন, তারা একই নামে সংগঠন করে নিজেদের পথে চলছেন। তারপরও মামলা হচ্ছে। এসব মামলার কারণে কার পকেট ভর্তি হচ্ছে? মামলা দায়েরকারীরা কী পাচ্ছেন? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর তারা দিতে চান না। তবে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ প্রবাসীদের মনে বাড়ছে ক্ষোভ।
মামলার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউ ইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটি। সংগঠনটির কার্যক্রম থেমে নেই। বিগত দিনে মামলার খড়গে নির্বাচন প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে। এ কারণে নতুন ভোটার তৈরি প্রক্রিয়া থেকে সদস্য ফি সংগ্রহ হয় নি। অপরদিকে নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হওয়ায় ভোটার মেশিন ভাড়ার খরচ জলে গেছে সংগঠনের। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশন ১৮ অক্টেবর পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচনও মামলার কারণে স্থগিত হয়ে যেতে পারে— এমন আশঙ্কা রয়েছে। ‘বাংলাদেশ সোসাাইটিকে সঠিক পথে তুলে আনার’ ঘোষণা দিয়ে ওই সংগঠনের সাবেক কর্মকর্তা ওসমান চৌধুরী ফের মামলা করবেন-জানিয়েছেন।
এর কিছুদিন আগে নীরা রাব্বানী নামে বাংলাদেশ সোসাইটির আজীবন সদস্য মামলা করেছিলেন। সোসাইটির বর্তমান কমিটির ২ বছরের মেয়াদকাল মামলার কারণে ৬ বছরে পড়েছে। লম্বা সময় সোসাইটিতে এই কর্মকর্তারা নির্বাচন ছাড়া থাকায় কমিউনিটিতে যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না। আড়চোখে তাদের দেখেন সাধারণ প্রবাসীরা। আবার তাদের নেতৃত্বও গতিহীন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
মামলা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী বলেছেন, আমরা এখন বিচলিত বোধ করছি। মামলার কারণে আমরা নির্বাচন করতে পারছি না। কমিউনিটিতে সাধারণ মানুষ এটা পছন্দ করছে না। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দু’একজন মানুষ মামলা করছেন। তারা আসলে কী চান-বুঝতে পারছি না। শুধু বুঝতে পারছি মামলা করে বাংলাদেশ সোসাইটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য বলেন, মামলা দায়েরের পেছনে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাত রয়েছে। তারা কমিউনিটিতে ‘মামলাবাজ’ তৈরি করেছেন এবং তাদের পেছনে অর্থ বিনিয়োগ করছেন। বড় বড় বুলি আওড়ানো মামলাকারীরা আসলে অর্থের লোভে মামলা করছে। তারা এক ধরনের ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেও মামলার আশংকার কথাও বলেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, এবার নির্বাচন হবেই। নতুন করে মামলা হলেও আদালতের অনুমতি নিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।
জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস এসোসিয়েশন সংক্ষেপে জেবিবিএ একাধিকবার মামলার শিকার হয়। প্রথমে নেতৃত্বের কোন্দলে খণ্ডিত হয় এবং মামলাও হয়। মামলা দায়েরকারীরা হারলে তারা একইনামে নতুন সংগঠন করে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি মামলা জয়ী পক্ষটির (সংগঠনের) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ফলাফল সঠিক হয়নি দাবি করে পরাজিত প্যানেলের প্রার্থীরা একটি মামলা করেন। গত সপ্তাহে মামলায় হেরে যান (নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা) তারা। লড়াই তবু শেষ হয় নি। পুনরায় নতুন করে মামলা করেছেন পরাজিতরা। গত বুধবার জ্যাকসন হাইটসে এক সংবাদ সম্মেলন করে মামলা দায়েরকারীরা জানান, মামলা দায়ের করার সময় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। তা সংশোধন করে পুনরায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সোসাইটি এবং জেবিবিএ ছাড়াও ব্রুকলিন বাংলাদেশি বিজনেস এসোসিয়েশন মামলার খড়গে পড়েছিল। নোয়াখালি সমিতি, চট্টগ্রাম সমিতিসহ আরও কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠন মামলা মোকাবেলা করেছে। ওজোনপার্ক ও ব্রঙ্কসের দুটি মসজিদ এবং এলমহার্স্টের একটি মন্দির পরিচালনা কমিটিও মামলা মোকাবেলা করেছে। সংগঠন বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেই মামলা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দেয়াও যায় না। তবে মামলা দায়ের করে ‘সমাধান’ বের করার নজির দেখা যাচ্ছে না। তবে কেন মামলা এবং কার স্বার্থে মামলা হচ্ছে-এমন প্রশ্ন অনেকের। মামলা করলে কার লাভ এবং কার ক্ষতি? এই প্রশ্নের একটাই জবাব স্পষ্ট-মামলায় শুধু এটর্নীদের লাভ আর ক্ষতি সংগঠনের তহবিলের।