নিজে বিক্রি হয়ে ভারত থেকে মেয়েকে ফিরিয়ে আনলেন মা
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত মা ও মেয়েকে ভারতে পাচারকারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট তিন জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
রবিবার মধ্য রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবী এবং মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে তাদের আটক করে র্যাব-৪।
র্যাব জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিরপুর ১২ নম্বর শাহ পরান ক্যাম্পের তরুণী খুশিকে বিউটি পার্লারে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করে কাল্লু-সোহাগের পাচার চক্র। তাকে খুঁজতে নানা তত্পরতা চালালেও পায়নি মা। ঘটনার কিছুদিন পর একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে খুশি তাকে জানায় সে ভারতে আছে। সে তার মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানায়। উপায় না দেখে মেয়েকে বাঁচাতে মা নিজেই বিক্রি হয়ে যান পাচারকারী চক্রের কাছে। চক্রের সদস্য কাল্লুর সহযোগিতায় তিনি ভারতে যান। ভারতের কিশোরগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার একটি পতিতা পল্লী থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে কয়েক মাস পর তিনি বাংলাদেশে আসেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে আসামিদের খুঁজে বের করা হয়।
চক্রের হাতে পাচার দুই শতাধিক তরুণী: এই চক্র এ পর্যন্ত দুই শতাধিক তরুণীকে পাচার করেছে। এক থেকে দেড় লাখ টাকায় একেক জনকে পার্শ্ববর্তী দেশের দালালের কাছে বিক্রি করত চক্রটি। কমান্ডার মঈন বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ থেকে জানা যায়, এক মা তার মেয়েকে পাচারকারীর হাত থেকে উদ্ধারে নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝুঁকি নিয়ে ভারতে যান। সেখানকার একটি নিষিদ্ধ পল্লি থেকে তার মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তিনি। দেশে ফেরার পথে সীমান্তে বিএসএফ তাদের আটক করে। সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনা দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কার্যকরী উদ্যোগ নেয় র্যাব। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে কাল্লু-সোহাগ চক্রের হোতাসহ তিন জনকে আটক করে র্যাব-৪।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চক্রটি ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে নারী ও তরুণীদেরকে পাচার করত। এক্ষেত্রে তাদের মূল টার্গেট ছিল দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণীরা। তাদের প্রলোভন দেখিয়ে যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী দেশে বিক্রি করে দিত। দেশে চক্রটির ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে।
পাচার হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েক দিন ভিকটিমদের রাখা হতো। পরে সুবিধাজনক সময়ে সড়কপথে তাদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে বিক্রি করা হতো। গ্রেফতার মো. কাল্লু রাজধানীর পল্লবী এলাকার চিহ্নিত মানব পাচারকারী ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তিনি ৮ থেকে ১০ বছর ধরে মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত। চক্রটি প্রায় দুই শতাধিক তরুণীকে পাচার করেছে। আটক কাল্লু জানান, জনপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকায় তাদের বিক্রি করা হয়েছে।