পশ্চিমবঙ্গে নতুন কৌশলে বিজেপি
দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে দিয়ে লোকসভার সদস্য (এমপি) সুকান্ত মজুমদারকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি করা হয়েছে। ২০২৩ পর্যন্ত সভাপতি থাকার মেয়াদ ছিল দিলীপের। কিন্তু এর এক বছর চার মাস আগেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। তার জায়গায় সভাপতি করা হয়েছে উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে। দিলীপ ঘোষের মতো সুকান্তও বিজেপির মাতৃসংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কাছের ও পছন্দের নেতা। তবে তিনি দিলীপের মতো অতটা সোচ্চার নেতা নন। দিলীপ সভাপতি থাকার সময় প্রচুর বিতর্কিত কথা বলেছেন। গরুর দুধে সোনা থাকা থেকে শুরু করে হোমগার্ডকে চড় মারা সমর্থন করা পর্যন্ত তার নানা কথা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। তুলনায় সুকান্ত এতদিন পর্যন্ত খুব বেশি বিতর্কিত মন্তব্য করেননি।
দিলীপ ঘোষকে অবশ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় সংগঠনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় বিজেপিতে এই পদের গুরুত্ব বা কাজ অত বেশি নয়। সংগঠনে সভাপতির পর সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্ব বেশি। সহ-সভাপতির পদ কার্যত গুরুত্বহীন বলেই মনে করেন বিজেপি নেতারা।
সভাপতি বদল নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এর কারণ প্রধানত দুইটি। প্রথমত, বিধানসভা নির্বাচনে খারাপ ফল এবং পরে একের পর এক সাংসদের দল ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার দায় মূলত দিলীপ ঘোষের ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুভেন্দু অধিকারীসহ একাধিক নেতার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তবে তার থেকেও বড় কারণ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের অংশ তথা উত্তরবঙ্গের এক নেতার হাতে রাজ্য বিজেপির ভার দিতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। তাদের কাছে বিধানসভা নির্বাচন অতীত। দলীয়ভাবে এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য আসন্ন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যটি থেকে যত বেশি সম্ভব আসনে জেতা।
গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। এর মধ্যে বেশিরভাগ আসন উত্তরবঙ্গের। ফলে বিজেপির মনোযোগ এখন উত্তরে। তৃণমূল ও বামদের ক্ষেত্রে সবসময়ই দলের দায়িত্বে থেকেছেন দক্ষিণবঙ্গের নেতা। বিজেপি অন্য পথে হেঁটে উত্তরবঙ্গের মানুষের মন পেতে চাচ্ছে। তবে গেল বিধানসভার ভোটে উত্তরবঙ্গে আসন বাড়িয়েছেন মমতা। আগামী লোকসভা নির্বাচন তিনি লড়তে চান প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে বা মোদির বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের নেতা হিসেবে। তিনি এখন থেকে সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের আসনে জেতার জন্য তিনি আবেগকে হাতিয়ার করতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে কখনো কেউ ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। সেই আবেগ নিয়ে ভোটে গেলে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। তাই উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্রকে দলের দায়িত্ব দিলেন মোদি-শাহ। এছাড়া সদ্যসাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি নেতা বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূলে যোগদান একটি কারণ হতে পারে।