ফুঁসছে গোটা ভারত, জ্বলছে লখনৌ
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ফুঁসছে গোটা ভারত। বিক্ষোভের ভয়ঙ্কর ছবি উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌতে পথে নেমে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বহু মানুষ।
বৃহস্পতিবার উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একের পর এক পুলিশের গাড়ি। শুধু গাড়ি নয়, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে একের পর এক পুলিশ ফাঁড়ি। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু সরকারি বাস, দমকলের গাড়ি।
এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এক বিক্ষোভকারী, আহত হন ২০ জনের বেশি।
এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসব শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার পিএস হার্শা বলেন, বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষে অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া দুই বেসামরিক নাগরিক আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়ায় আমাদের হাতে কোনও বিকল্প ছিল না। সর্বশেষ উপায় হিসেবে আমরা বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছি।
অন্যদিকে, লখনৌতে আক্রান্ত সংবাদমাধ্যমও। লখনৌয়ের বিভিন্ন জায়গায় সংবাদমাধ্যমের ওবি ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মারধর করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের লোকজনকেও। সংবাদমাধ্যমকর্মীরা অভিযোগ করেছে, পুলিশের সামনেই বিক্ষোভকারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে। অভিযোগ রয়েছে, পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও পুলিশের তরফে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় নি।
জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে লখনৌ জুড়ে এই তাণ্ডব চালাচ্ছে। এই ঘটনার পর গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ১৪৪ জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে, অশান্তি রুখতে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানী নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করে। দিনভর দিল্লির বিক্ষোভ থেকে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। বেঙ্গালুরুর টাউন হল এলাকা থেকে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা যোগেন্দ্র যাদবসহ দিল্লির রেড ফোর্ট এলাকা থেকেও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিক্ষোভে উত্তাল দিল্লিতে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিল্লির অন্তত ১৮টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে টানা তৃতীয় দিনের মতো আজও রাজপথে নেমে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসিবিরোধী বিক্ষোভে কলকাতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে বেঙ্গালুরুতেও। বৃহস্পতিবার সকালে বেঙ্গালুরুর রাস্তায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পথে নেমে আটক হয়েছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। এছাড়াও ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করার অভিযোগে আরও ৩০ জনকে আটক করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
অশান্তির কালো মেঘ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এলাকা গুজরাটের আহমেদাবাদেও। আহমেদাবাদেও পথে নেমে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। সেখানেও পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।