ফ্লোরিডা যার, হোয়াইট হাউস তার
শিতাংশু গুহ
ফ্লোরিডা, ফ্লোরিডা, ফ্লোরিডা। ফ্লোরিডা জিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হবেন? যেমনটা হয়েছিল ২০১৬-তে? ফ্লোরিডা না জিতলে ট্রাম্প হারবেন, অর্থাৎ যিনি ফ্লোরিডা জিতবেন তিনিই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
তাহলে কি টেক্সাস ফ্যাক্টর নয়? অবশ্যই, ১৯৭৬ সাল থেকে টেক্সাস রিপাবলিকানদের দখলে, যেমন ক্যালিফোরনিয়া ও নিউ ইয়র্ক ডেমোক্রেটদের দখলে, তাই বলা যায়, রেস টাইট হলেও ট্রাম্প টেক্সাস জিতবেন। ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, টেক্সাসে এবার ইতোমধ্যে ৯মিলিয়ন মানুষ ভোট দিয়েছে, যা ২০১৬’র প্রদত্ত মোট ভোটের বেশী। এটি ট্রাম্পের পক্ষে না বিপক্ষে বলা মুশকিল। তবে টেক্সাস না জিতলে ট্রাম্প হারবেন।
ফ্লোরিডার ২৯টি ইলেক্টোরাল ভোট আছে, ২০১৬-তে ট্রাম্প মাত্র ১ ভাগ ভোটে জিতেছেন। এবার টাইট সিচুয়েশন। ট্রাম্প যদি ফ্লোরিডাতে জয় পান, এবং ২০১৬-তে জয় পাওয়া ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট যেমন, আইওয়া এবং ওহাইও জেতেন (এ দুই স্টেট ২০১৬-তে তিনি প্রায় ৮% ব্যবধানে জিতেছিলেন), সাথে মিশিগান অথবা পেনসিলভানিয়া, এবং মিনেসোটা ও উইসকনসিনের মধ্যে একটি স্টেটে জয় পান, তবে তিনি আরও চার বছরের জন্যে নির্বাচিত হবেন।
বাইডেনের জন্যে সুবিধের হচ্ছে, ক্যালিফোরনিয়া বা নিউ ইয়র্কের মতো বড় বড় স্টেট সবসময়ই ডেমোক্রেট, রিপাবলিকান শিবির থেকে তিনি ফ্লোরিডা বা টেক্সাস ছিনিয়ে আনতে পারলে, সাথে ছোটখাট দু’একটি স্টেট, তবেই তিনি জিতে যাবেন। রিপাবলিকান শক্ত ঘাঁটিগুলো এবার কিছুটা নড়বড়ে, বাইডেন দুর্বল প্রার্থী হওয়া সত্বেও এজন্যে তিনি জয় পেতে পারেন।
ট্রাম্প যদি হারেন, তা হবে কোভিড-১৯’র কারণে। যুক্তরাস্ট্রে এত মৃত্যুর জন্যে অনেকেই তাকে দায়ী করছেন। শেষ সময়ে ট্রাম্প মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন চষে বেড়াচ্ছেন, এ ৩টি স্টেট ২০১৬-তে তিনি মাত্র ১ ভাগ ভোটে জিতেছেন। জরিপে বাইডেন মিশিগানে ৮.৬%, পেনসিলভানিয়ায় ৩.৫% এবং উইসকনসিনে ৬.৪% এগিয়ে। ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রযোজক লিবারেল মাইকেল ম্যুর সতর্ক করে বলেছেন, জরিপে বাইডেনকে অগ্রবর্তী দেখালেও বাস্তবে তা নাও হতে পারে, রিপাবলিকানদের সমর্থন সবসময় কম করে দেখানো হয়। মাইকেল ম্যুর রিপাবলিকান নন, তবে তিনি সত্য বলেছেন। ট্রাম্প যদি ২০১৬’র মতো এবারও এ ৩টি স্টেটে জিতে যান, সাথে মিনেসোটা, আইওয়া, ওহাইয়ো তবুও তিনি পুনঃনির্বাচিত হবেন। জরিপ নিয়ে খুশি বা দুঃখিত হয়ে লাভ নেই, কারণ ২০১৬-তে সকল জরিপ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রায় সকল মিডিয়া বলছে, গত কয়েকদিনে ট্রাম্প অনেকটা এগিয়ে গেছেন, ভোটের দিনে তিনি ওইসব স্টেটে আরও এগিয়ে যেতে পারেন?
পেনডেমিকের আগে মার্কিন অর্থনীতি ছিল যথেষ্ট চাঙ্গা, বেকারত্ব ছিল সর্বনিন্ম ৩.৬%, তিনি ৬৭ লক্ষ নুতন চাকরি সৃষ্টি করেছিলেন, জ্বালানি তেলে পরনির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছেন, ডেমোক্রেট রাজ্যে ক্রাইম বাড়লেও সামগ্রিকভাবে তিনি অপরাধ ১৫ ভাগ নামিয়ে এনেছেন। সীমান্ত রক্ষায় সফল ও অবৈধ অনুপ্রবেশ একরকম বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন, আরব-ইসরাইল চুক্তি, তালেবান-আফগান চুক্তি স্বাক্ষরে তার অবদান অসীম। সবচেয়ে বড় কথা তিনি কোন যুদ্ধে জড়াননি। শান্তির পক্ষে তার এই অবদানের জন্যে তিনি দু’বার নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছেন; যদিও পান নি। তার আমলে জিডিপি বছরে প্রায় ৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, জাতীয় রাজস্ব ১৭.৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২১.৪৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। যদিও করোনার কারণে এখন সেটি দেখা যাচ্ছে না। ইমিগ্রেশন সম্পর্কে মানুষের একটি ভুল ধারণা আছে, তা হচ্ছে, রিপাবলিকানরা ইমিগ্রেশনের বিপক্ষে। আসল ঘটনা হচ্ছে, রিপাবলিকানরা ১৯৮৬ সালে এমেনেস্টি দিয়েছিল। আমরা বাংলাদেশিরা মূলত আমেরিকায় এসেছি ওপি-১ এবং ডিভি লটারির মাধ্যমে, এ দুটোই রিপাবলিকানদের দেয়া। বাংলাদেশিদের তো উচিত ট্রাম্পকে একচেটিয়া ভোট দেয়া!
২০১৬-তে যারা ট্রামকে ভোট দিয়েছেন, তারা এখনও একাট্টাভাবে ট্রাম্পের পক্ষে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার ভোরে এক টুইটে তার ভোটারদের জো বাইডেনকে ঠেকানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাইডেন সুপ্রিমকোর্ট ধ্বংস করে দেবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডিক মরিস বলেছেন, ট্রাম্প যদি ২০১৬ থেকে বেশী কালো ভোট পান, তবে তিনি জিতে যাবেন। কলামিস্ট লরেন্স কাদিস বলেছেন, বাইডেনকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি চীনের প্রার্থী নন! এফিবিআই ডিসেম্বর ২০১৯-এ বাইডেন পুত্র হান্টার বাইডেনের ব্যবসা নিয়ে তদন্ত করছে এবং তাদের হাতে একটি ল্যাপটপ আছে। বাইডেন পুত্রের সাবেক পার্টনার টনি ববুলিনোস্কি ২৩ অক্টোবর এফবিআইয়ের সাথে ৫ঘন্টা সাক্ষী দিয়েছেন।
ধরা যাক, উভয় প্রার্থী যদি সম-সংখ্যক, অর্থাৎ ২৬৯-২৬৯ ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যান, তাহলে কি হবে? টাই? সেক্ষেত্রে মামলা সুপ্রিমকোর্টে যাবে এবং চূড়ান্ত রায় পেতে দেরী হবে। এমনিতে এ বছর বিপুল মেইল-ইন ভোটের কারণে চূড়ান্ত ফলাফল নির্বাচনী রাতে জানার সম্ভবনা কম। খুব তাড়াতাড়ি হলে বুধবার, নয়ত শুক্রবারের মধ্যে জানা যাবে।❐
নিউ ইয়র্ক থেকে