বিধ্বস্ত হওয়া ইউক্রেনগামী বিমানটি ভুল করে ভূপাতিত করে ইরান
যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তেহরানের কাছে বিধ্বস্ত হওয়া ইউক্রেনগামী বিমানটি ভুল করে ভূপাতিত করেছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা, এক সিনিয়র মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও এক ইরাকি গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউজউইক জানিয়েছে, রাশিয়ার তৈরি টর-এম১ ক্ষেপণাস্ত্র বিমানটিতে আঘাত করে। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি ন্যাটো জোটের কাছে গান্টলেট নামে পরিচিত।
গত ৮ জানুয়ারি (বুধবার) সকালে তেহরানের ইমাম খোমেনি বিমানবন্দর থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উদ্দেশে উড্ডয়নের পরপরই একটি বোয়িং ৭৩৭ বিমান বিধ্বস্ত হয়। নিহত হয় বিমানটিতে থাকা ১৮০ আরোহীর সবাই। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। বিধ্বস্ত বিমানের ব্লাক বাক্সটি খুঁজে পেয়ে সেটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িং বা মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর না করার ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
তেহরানের ঘোষণার পর পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা এবং সিনিয়র মার্কিন গোয়েন্দার বরাত দিয়ে নিউজউইক জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের ধারণা দুর্ঘটনাক্রমে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরানের বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা চালু ছিল।
মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, তেহরানে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় দুটি মিসাইল উৎক্ষেপণের বৈদ্যুতিক শব্দ শনাক্ত করে মার্কিন স্যাটেলাইট ব্যবস্থা। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও একটি বিস্ফোরণের শব্দও শনাক্ত করা হয় বলে দাবি করেছে সূত্রটি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এসব খবর প্রকাশের পর বিমানটি বিধ্বস্তের কারণ নিয়ে ধারণা জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন বিমানটি নিয়ে ‘আমার সন্দেহ রয়েছে। বেদনাদায়ক বিষয়, আমি যখন খবর পেলাম এটা বেদনায়ক ঘটনা। কিন্তু অন্যদিকে কেউ হয়ত ভুল করে থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ বলছে এটা যান্ত্রিক (ত্রুটি)। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না এটা একটা প্রশ্নও হতে পারে। সেকারণে কী ঘটেছে সেটা দেখতে হবে। খুবই ভয়াবহ কিছু ঘটেছে। খুবই মারাত্মক।’
বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটিতে ছিলেন ৮২ জন ইরানি, ৬৩ জন কানাডীয় এবং নয় কর্মীসহ ১১ জন ইউক্রেনের নাগরিক। এছাড়া সুইডেনের ১০, আফগানিস্তানের ৭ এবং জার্মানির ৩ নাগরিকও বিমানের আরোহী ছিল। এদের সবাই নিহত হয়।
বৃহস্পতিবার ইরানের বেসামরিক বিমান সংস্থার প্রধান আলী আবেদ জাভেহ বলেছেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা অনুসন্ধানে সহায়তার জন্য কানাডা এবং সুইডেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বৈজ্ঞানিকভাবেই এটি অসম্ভব আর এই ধরনের গুজবের কোনও ভিত্তি নেই’।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) বিদেশি শাখা কুদস বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়। এই হামলার ‘মারাত্মক প্রতিশোধ’ হিসেবে বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে ইরাকের মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। আর ওইদিনই তেহরানের কাছে বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী ৭৫২ নম্বর ফ্লাইট।