বিশ্বকাপে তৃতীয় শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা
রুদ্ধশ্বাস, রোমাঞ্চ আর তুঙ্গস্পর্শী উত্তেজনা। সব মিলিয়ে বলা যায় এক মহাকাব্যিক ফাইনাল। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টালো ম্যাচের রং। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ২-২ গোলে ড্র। অতিরিক্ত সময়ে মেসি ও এমবাপের গোলে ব্যবধান ৩-৩। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই শেষ হাসি আর্জেন্টিনার (৪-৩)। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার এটি তৃতীয় শিরোপা।
টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি নিতে যান মেসি। ফেরার পথেই স্বপ্নের শিরোপায় চুমু এঁকেছেন মেসি।
৩৬ বছর পর শিরোপা খরা ঘুচল আর্জেন্টিনার। মেসির হাতে উঠল পরম আরাধ্যের সোনালী ট্রফি। মেসির হাতে ট্রফি দিয়ে যেন ফুটবলও তার দায় শোধ করল। মেসি দেখালেন তার শেষ ক্যারিশমা। এখন হয়তো মেসিকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলা যেতে পারে, তাতে কোন বিতর্ক থাকবে না। অন্যদিকে হ্যাটট্রিক করেও ফাইনালটা বিষাদময় হলো এমবাপের। জেতা হলো না ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা।
লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট দেখানো শুরু আর্জেন্টিনার। বেশকটি আক্রমন করে দলটি। আসে গোলের সুযোগ। কিন্তু পূর্ণতা পাচ্ছিল কোন আক্রমণ। ৫ মিনিটে ম্যাচের প্রথম শট ম্যাক অ্যালিস্টারের। সরাসরি গোলকিপারের হাতে। ১০ মিনিট একটা সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে কর্নারে প্রতিহত।
১৭ মিনিটে সংঘবদ্ধ আক্রমণে ডি মারিয়ার শট চলে যায় ফ্রান্সের পোস্টের উপর দিয়ে। ২০ মিনিটে উল্লেখযোগ্য আক্রমণে যায় ফ্রান্স। বক্সের সামান্য বাইরে ফ্রি কিকে জিরুদের হেড অল্পের জন্য চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে।
প্রথমার্ধের ২৩ মিনিটে বা প্রান্ত দিয়ে ফ্রান্সের ডি বক্সে ঢুকার চেষ্টা করেন ডি মারিয়া। ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেন উসমান দেম্বেলে। পেনাল্টির বাশি বাজান রেফারি। ফরাসি গোলরক্ষক লরিসকে বোকা বানিয়ে মেসির গোল। আনন্দে মাতে টিম আর্জেন্টিনা।
৩৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আর্জেন্টিনা। দারুণ পাল্টা আক্রমণে। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে মেসির ম্যাজিক্যাল পাস। ম্যাক অ্যালিস্টারকে টেনে নিয়ে গেলেন অনেকদূর। তারপর দারুণ ক্রস। চলতি বলে শট করে ডি মারিয়ার গোল (২-০)।
প্রথমার্ধে ছয়টি শটের তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে দুটিতে গোল। অন্যদিকে ফ্রান্স গোল পোস্টে কোন শটই নিতে পারেনি। আদায় করতে পারেনি কোন কর্ণারও। সেখানে আর্জেন্টিনা কর্ণার পায় দুটি।
প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ছিল দলটির দাপট। তবে ৮০ মিনিটের পর ম্যাচে মোড়। পেনাল্টি পেয়ে যায় ফ্রান্স। মুয়ানিকে ফাউল করেন ওতামেন্ডি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপে। পরের মিনিটেই আবার এমবাপ্পে ঝলক। থুরামের পাসে বুলেট গতির শটে গোল করেন তিনি। ম্যাচে সমতা আসে ২-২ ব্যবধানে।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে থেকেই বাঁ পায়ে দুরন্ত শট নিয়েছিলেন মেসি। এক হাতে অনবদ্য ভঙ্গিতে সেটি বাঁচিয়ে দেন হুগো লরিস। দিনের সেরা সেভ। ম্যাচের প্রথম দিকে যে ঝাঁজ দেখা যাচ্ছিল আর্জেন্টিনার আক্রমণে, সেই ঝাঁজ দেখা গেল ফ্রান্সের খেলায়।
১০৫ মিনিটে গোলের দুটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে আর্জেন্টিনা। বক্সের মধ্যে মার্তিনেজের শট শুয়ে রক্ষা করেন ফরাসি ডিফেন্ডার উপামেকানো। ফিরতি বলে দারুণ আগুণে ভলি মন্টিলের। হেডে তা রক্ষা করেন ফ্রান্সের ভারানে।
১০৮ মিনিটে মেসির গোল। ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ১১৮ মিনিটে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। গোল করে দলকে সমতায় আনেন এমবাপ্পে। হয়ে যায় তার হ্যাটট্রিকও। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
এখানে নায়ক আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্তিনেজ। দুটি শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। দুটিতে গোল হজম। অন্যদিকে চারটি শটেই গোল করে বিশ্বজয়ের আনন্দে মাতে গোটা আর্জেন্টিনা।