বিশ্বে করোনায় ১৩৫ দিনে ৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু, শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে
মহামারী করোনাভাইরাস আবির্ভাবের ১৩৫ দিন কাটল। বৃহস্পতিবার ১৪ মে নাগাদ এই ৪ মাসে বিশ্বের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যা ৩ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে জানুয়ারির শেষের দিকে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস দ্রুত চীনের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বিপদ ঘনিয়ে আসছে জেনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস সংক্রমণকে গত ১১ মার্চ মহামারি ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে সতর্ক করে দেয়।
শতাব্দীর ভয়াবহ মারণ ভাইরাস করোনা প্রতিদিন লাশের সারিতে যুক্ত করেছে হাজার হাজার মানুষের নাম। ভাইরাসটির কোনও চিকিৎসা এখনও খুঁজে পান নি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তবে আশার বাণী প্রতিনিয়ত শোনাচ্ছেন করোনার ভ্যাকসিন ও প্রতিষেধক তৈরির শতাধিক প্রকল্পের গবেষকরা।
এদিকে বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, হয়ত এই ভাইরাস কখনই নির্মূল হবে না। প্রাণঘাতী এইডসের মতো এই ভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়ত চলতে হবে মানব সভ্যতাকে।
এইডস শনাক্তের ৩৯ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এর কোনও ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার করতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা। ১৯৮১ সালে এইডস প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়; সেই সময় মাত্র দুই বছরের মধ্যে এর ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে বলে মার্কিন বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিলেও এখনও তা আলোর মুখ দেখে নি।
করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত রূপ বদলিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা চলতি বছরের শেষের দিকে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে বলে আশার বাণী শোনালেও ৩ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এইডসের মতো এই ভ্যাকসিন নাও মিলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।
আশা-নিরাশার এমন দোলাচলে প্রাণ কাড়ার মিশনে থেমে নেই করোনাভাইরাস। চীনে গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন এই ভাইরাস মাত্র ৪ হাজার ৬৩৩ জনের প্রাণ কাড়লেও মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে আমেরিকা এবং ইউরোপকে।
১৫ মে শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ লাখ ২৭ হাজার ১২৭ জন। এরমধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্ত ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৩ জন।
এছাড়া করোনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩ লক্ষ ৩ হাজার ৪১৩ জনের।
এখন পর্যন্ত একক দেশ হিসেবে করোনায় সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে; দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৮৬ হাজার ৯১২ জন। আক্রান্তের তালিকাতেও শীর্ষে থাকা এই দেশটিতে বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৫৯৩ জন। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লক্ষ ১৮ হাজার ২৭ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটেছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে; দেশটিতে মারা গেছেন ৩৩ হাজার ৬১৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৫১ জন।
করোনায় যুক্তরাজ্যের পর ইউরোপে মৃত্যুপরীতে পরিণত হয়েছে ইটালি; দেশটিতে প্রাণহানি ঘটেছে ৩১ হাজার ৩৬৮ জনের। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৬ জন। তবে দেশটিতে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার ২৮৮ জন।
এরপর করোনায় মৃত্যুতে শীর্ষে আছে স্পেন; দেশটিতে মারা গেছেন ২৭ হাজার ৩২১ জন। স্পেনে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লক্ষ ৭২ হাজার ৬৪৬ জন। তবে সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৮০ জন।
স্পেনের মতোই ইউরোপের আরেক উন্নত দেশ ফ্রান্সেও মারা গেছেন ২৭ হাজার ৪২৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৭০ জন।
এছাড়া ব্রাজিলে মৃত্যু ১৩ হাজার ৯৯৯, বেলজিয়াম ৮ হাজার ৯০৩, জার্মানি ৭ হাজার ৯২৮, ইরান ৬ হাজার ৮৫৪ জনের প্রাণহানি নিয়ে করোনায় মৃত্যুর শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় আছে।
এদিকে, ইউরোপের পর করোনার নতুন হটস্পট হয়ে উঠছে এশিয়া। বর্তমানে এই মহাদেশে ৭ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৭০ জন। মারা গেছেন ২৩ হাজার ৬২৭ জন। মহাদেশের হিসাবে প্রাণহানির এই সংখ্যা ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকার পর চতুর্থ সর্বোচ্চ।
এশিয়ায় করোনায় ৬ হাজার ৮৫৪ মৃত্যু নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ইরান। দেশটিতে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৩।
এরপরই আছে চীন, করোনার উৎপত্তিস্থল এই দেশটিতে মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৩ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৯৩৩ জন।
আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে প্রতিবেশি ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে ৮২ হাজার ১০৩ জন। ২ হাজার ৬৪৯ মৃত্যু নিয়ে এশিয়ায় করোনার নতুন হটস্পট হতে যাচ্ছে ১৩০ কোটি মানুষের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই দেশ।◉