বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উল আলম মারা গেছেন
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সচিব, রাষ্ট্রদূত আনোয়ার উল আলম শহীদ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি… রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব জানান, রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, ১ নভেম্বর আনোয়ার উল আলম শহীদের মস্তিষ্কের টিউমার অপসারণ করা হয়। তখন থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। পরে তার শরীরে আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তিনি করোনাভাইরাস থেকেও মুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।
আনোয়ার উল আলম শহীদ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকালে আনোয়ার উল আলম শহীদের মরদেহ হাসপাতাল থেকে তার গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে ঢাকার সেনানিবাস কবরস্থানে দাফন করার বিষয়ে আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হারুন হাবীব বলেন, আজকে শহীদ ভাইয়ের মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল কখন, কোথায় জানাজা হবে, বা কখন দাফন হবে সে সিদ্ধান্ত নেবেন তার ছেলে ও মেয়ে।
আনোয়ার উল আলম ১৯৪৭ সালে টাঙ্গাইলের থানাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৌলভী আবদুর রাহীম ইছাপুরী ছিলেন ইসলামী পণ্ডিত ও টাঙ্গাইলে ব্রিটিশ-বিরোধী রাজনৈতিক মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেতা।
তিনি ১৯৬২ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং একই সঙ্গে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি।
১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আনোয়ারুল আলম শহীদ। এসময় বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
আবদুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান ছিলেন আনোয়ার উল আলম। মুক্তিবাহিনীর একটি সাপ্তাহিক মুখপাত্র ‘রণাঙ্গন’ প্রকাশনা শুরু হলে ‘রণদূত’ ছদ্মনামে আনোয়ার উল আলম শহীদ এই পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর সাবেক ইপিআর ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হলে তাকে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি রক্ষীবাহিনীর সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান।
রক্ষীবাহিনী বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরে যান। কর্নেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর ১৯৭৮ সালে সরকার তাকে অবসর দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
পরে আনোয়ার উল আলম জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি ছিলেন। জাকার্তা থেকে বদলি হয়ে যান কুয়ালালামপুরে, পরে ব্রুনাই, হংকংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসেও চাকরি করেন তিনি। শেষে সচিব মর্যাদায় বাহরাইন ও স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হন তিনি।
আনোয়ার উল আলম ২০০৬ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ❐