বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা আরো বিপর্যয়ে পড়ার শঙ্কা
বিশ্বজুড়ে সবররাহ ব্যবস্থার সংকট আন্তর্জাতিক বাজারে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রভাবে খাদ্যপণ্য ও কম্পিউটার থেকে ওয়াশিং মেশিন পর্যন্ত সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। চলতি বছর আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থা চীনের কভিডজনিত লকডাউন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আকাশচুম্বী জ্বালানির দামসহ অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান আশঙ্কা করছে, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ এ পরিস্থিতি অব্যাহত কিংবা এমনকি খারাপ হতে পারে। খবর ইপোক টাইমস।
বিশ্বজুড়ে মান নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান কিউআইএমএর সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা অপরিবর্তিত কিংবা আরো খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমন মতামত প্রকাশের হার ৮১ শতাংশ এবং ইউরোপীয় সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে তা ৮০ শতাংশ।
সমীক্ষায় প্রতিষ্ঠানগুলো বিস্তৃত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছে। শীর্ষ তিনটি চ্যালেঞ্জ হলো উৎপাদন ও সরবরাহের সময়সূচি ঠিক রাখা, ভোক্তা চাহিদা এবং পর্যাপ্ত উৎপাদন ক্ষমতা অব্যাহত রাখা।
চীনের দীর্ঘমেয়াদি জিরো কভিড নীতি এবং মূল বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোয় বার বার লকডাউন ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া কাঁচামাল, পণ্য ও শ্রমব্যয় বৃদ্ধি এবং কাঁচামালের ঘাটতি অনেক বড় প্রভাব ফেলছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কিউআইএমএর পৃথক তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।
এসব প্রতিবন্ধকতা কিছুটা এড়াতে বিশ্বজুড়ে ক্রেতারা চীননির্ভরতা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বিশেষ করে কভিডজনিত লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ উত্তরদাতা চলতি বছর সরবরাহ ব্যবস্থায় ভয়াবহ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যদিও এমন আশঙ্কা প্রকাশের ক্ষেত্রে ছোট ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান ছিল।
নতুন সমীক্ষা অনুসারে, উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চীনা সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা সবচেয়ে শক্তিশালী রয়ে গিয়েছে। যদিও বড় প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনগুলো এ নির্ভরতা কমিয়ে আনছে। তবে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্রুত সময়ের মধ্যে সোর্সিং পরিবর্তন করার সক্ষমতা কম। সরবরাহ ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই আঞ্চলিক সোর্সিং পরিবর্তনে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডকে অবিচ্ছেদ্য বাজার হিসেবে বিবেচনা করছেন। চীনানির্ভরতা কমানোর এ প্রবণতার কারণে ভারত ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছিল। আগামী কয়েক মাসে ভারতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। কারণ শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক পতনের কারণে দ্বীপরাষ্ট্রটি থেকে সংস্থাগুলো সম্পদ ও কার্যক্রম ভারতে সরিয়ে নিচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহত্তর তত্পরতা এবং স্থিতিস্থাপকতার জন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা অপরিহার্য বলে উপলব্ধি করছে। এক্ষেত্রে সরবরাহে বৈচিত্র্য এবং অংশীদারত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে কিছু বিশ্লেষক বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতির লক্ষণ দেখছেন। মার্কিন আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান মর্নিংস্টারের একজন জ্যেষ্ঠ ইকুইটি বিশ্লেষক মাইকেল ফিন্ড বলেন, বিস্তৃত পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের বিলম্ব কমে আসছে। পাশাপাশি চলতি বছর কার্গো উড়োজাহাজ ও সমুদ্রগামী জাহাজের মালবাহী সক্ষমতা বাড়ছে। এতে পণ্য পরিবহনের খরচও নিম্নমুখী হতে পারে, যা বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতিকে কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বহিরাগত ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সাংহাইতে লকডাউন সরবরাহ ব্যবস্থায় আরো চাপ যুক্ত করেছে। তবে একেবারে রাতারাতি এসব প্রতিবন্ধকতা শিথিলের সম্ভাবনা কম।