ব্যবসায়ী ও পুঁজিপতিদের স্বার্থের বলি ‘পৃথিবীর ফুসফুস’
মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ফুসফুস। এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বলার কিছু নেই। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। এই ফুসফুস নষ্ট হলেই ঘটে জীবনাবসান।
বিশ্বের বৃহত্তম চিরহরিৎ বন আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। কারণ প্রাণীদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ২০ শতাংশই আসে এই বন থেকে। তাছাড়া প্রতি বছর ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এই বন। পৃথিবীর বেশিরভাগ নদীর উৎস আমাজন। রয়েছে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, বাস করে তিন শতাধিক উপজাতি মানুষ। অথচ খুবই দরকারি এই আমাজন আজ হুমকির মুখে, অস্তিত্ব সংকটে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে এ বন। ব্যবসায়ী ও পুঁজিপতিদের স্বার্থের বলি হচ্ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’।
৭০ লাখ বর্গ কিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই জঙ্গলের প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯টি দেশজুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত।
আমাজন জঙ্গলের ৬০ ভাগ ব্রাজিলে, ১৩ ভাগ পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানায়।
আমাজন বনে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু চলতি বছর আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এবারের মতো আগুন আগে কখনও ছড়ায় নি। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (আইএনপিই) বলছে, চলতি বছরে আমাজনের ব্রাজিল অংশে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
গত বছরের তুলনায় যা ৮০ শতাংশ বেশি এবং ২০১৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। সংস্থাটির হিসাব মতে, দাবানলে প্রতি মিনিটে আমাজন প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকা পুড়ে যাচ্ছে। এভাবে বন উজাড় হতে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী আন্দোলনে বিশাল বাঁধা তৈরি হবে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা।
আগস্টের শেষভাগে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ খ্যাত আমাজন চিরহরিৎ বনে ভয়াবহ দাবানল নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। জার্মান চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা এ দাবানলকে ‘আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা’ হিসেবে অভিহিত করেন। আমাজনের দাবানল নিয়ে জি৭ সম্মেলনেও আলোচনা হয়। পরিবেশবিদদের মতে, এই আগুন প্রাকৃতিকভাবে লাগেনি। ব্রাজিলের ফেডেরাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, শুকনো বাতাসে দাবানল জ্বলে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তবে এ ক্ষেত্রে দাবানলের প্রকোপে আগুন লাগেনি বলেই মনে করছেন তারা। বিজ্ঞানীদের মতে, অনেক সময়েই চাষের জন্য জমি বা খামার তৈরি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।