ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ, নিহত ৭
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে সোমবারের সংঘাতের পর মঙ্গলবার সকালে নতুন করে বিক্ষোভ জোরালো হয়েছে।
এদিন সকালে মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীতে আবারও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একে অপরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় পাথরবৃষ্টি। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও।
এদিকে সোমবারের সংঘর্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, গত বছর দেশটির পার্লামেন্টে নতুন এই আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানী নয়াদিল্লিতে একদিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সংঘাত-সংঘর্ষে দিল্লিতে এক পুলিশ সদস্য ও ছয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের মাঝে যানবাহন পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবার দিল্লির উত্তরাঞ্চলে আরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার মৌজপুরে একটি ই-রিকশায় ভাঙচুর চালানো হয়। রিকশার যাত্রীদের লুট করা হয় তাদের মূল্যবান জিনিসপত্রও।
খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ)। উদ্ধার হয় কার্তুজের খোল। মৌজপুর এবং ব্রহ্মপুরীর মতো একই পরিস্থিতি কারওয়াল নগরে। ভোররাতে সেখানে একটি টায়ার কারখানায় বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরানো হয় বেশ কিছু গাড়িতেও। তবে পুলিশি নিরাপত্তা না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত সেখানে গিয়ে পৌঁছায় নি দমকলবাহিনী।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির ফায়ার সার্ভিস ডিরেক্টরের তরফে জানানো হয়েছে, গতকাল থেকে এদিন ভোর ৩টা পর্যন্ত দিল্লির নানা প্রান্ত থেকে তাদের কাছে ৪৫ বার ফোন এসেছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে তাদের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। একটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নিতে চান তারা।
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশও। তাদের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসা অব্যাহত বলে ফোনে লাগাতার অভিযোগ পাচ্ছি আমরা।’
সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করায় গতকালই রাজধানীর একাধিক মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এদিনও জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিব বিহার মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই সমস্ত স্টেশনে বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো চলাচলও। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলও বন্ধ রাখা হয়েছে। একাধিক জায়গায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
বিবিসির নয়াদিল্লি প্রতিনিধি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিল্লিতে আতিথেয়তা দেওয়ার মাঝে সংঘর্ষের এই ঘটনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ট্রাম্পের ভারত সফরকে আড়ালে ফেলেছে এই সহিংসতা।
দিল্লির নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফেডারেল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে দিল্লি পুলিশ নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবহিত করেছে।
দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রাতেই দিল্লি পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মুহূর্তে রাজধানীতে রয়েছেন। যত শিগগির সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিন দুপুরেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অনিল বৈজল এবং অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা তার। ♦