ভারতে কৃষকরা করপোরেটদের দাসে পরিণত হতে চান না
ভারতের রাজধানী দিল্লিকে কার্যত ঘিরে রেখেছেন বিতর্কিত কৃষি আইনবিরোধী বিক্ষোভকারী কৃষকরা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা কৃষকরা রাজধানীতে প্রবেশের প্রধান পাঁচটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই মূল সড়কগুলোর মধ্যে দুটি পুরোপুরি ও একটি আংশিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন কৃষকরা। অন্য দুটি রাস্তাতেও কৃষকরা অবস্থান নিয়েছেন।
ভারতের ইতিহাসে এবার কৃষকরা সরকারের বিরুদ্ধে এভাবে একাট্টা হওয়ার অন্যতম কারণ, তারা নতুন আইনের অধীনে করপোরেটদের দাসে পরিণত হতে চাইছেন না।
গত পাঁচ দিন ধরে তারা দিল্লিতে আসার চেষ্টা করছেন। পুলিশের অবরোধ, লাঠি, টিয়ার গ্যাস, জলকামান অগ্রাহ্য করে তারা দিল্লির সীমান্তে চলে এসেছেন। কৃষকরা বলছেন, এই কৃষিনীতি তাদেরকে করপোরেট দাসে রূপান্তরিত করবে। কীভাবে কৃষকদের আন্দোলন সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে গত রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরসহ চার-পাঁচ মন্ত্রী। সকালে আবার অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তোমর। তারপর সরকার জানিয়েছে, তারা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি। তবে কৃষকদের দিল্লিতে ঢোকা চলবে না। তাদের চলে যেতে হবে দিল্লির সীমান্ত থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরের বুরারিতে।
কৃষকরা সরকারের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। হাজার হাজার কৃষক হরিয়ানার টিকরি ও সিংঘু সীমানা বন্ধ করে দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর সীমানাও আংশিকভাবে বন্ধ। পুলিশের পক্ষ থেকে মানুষকে বিকল্প পথে দিল্লিতে ঢুকতে বলা হয়েছে। এই শীতের মধ্যেও কৃষকদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হয়। খোদ শিবসেনা বলেছে, এই শীতে কৃষকদের বিক্ষোভে জলকামান ব্যবহার খুবই নিষ্ঠুর একটা ব্যাপার। ইতোমধ্যে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। একজন কৃষক জলকামানের ওপর চড়ে তা বন্ধ করে লাফিয়ে আবার নিজের ট্রাক্টরে ফিরছেন।
কৃষকরা দিল্লির অভ্যন্তরে বিক্ষোভ ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। ৫শ’র মতো কৃষক সংগঠন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ করছে। তার মধ্যে বামপন্থি সংগঠনও আছে। হাজার হাজার কৃষক ট্রাক্টরে করে মাস দুয়েকের খাবার সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। তারা এসেছেন মূলত ছয়টি রাজ্য থেকে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কেরালা ও রাজস্থান থেকে।
কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কৃষকরা। মোদি সরকার সম্প্রতি কৃষি আইনে বদল করে করপোরেট চাষ ও কৃষকদের কাছ থেকে যত খুশি ফসল কেনার অনুমতি দিয়েছে। করপোরেশনগুলো কৃষকদের আগাম টাকা দিয়ে কী চাষ করতে হবে সেটাও বলে দিতে পারবে। এই ছয় রাজ্যের কৃষকদের ধারণা, এর ফলে তাদের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে। তারা শেষ পর্যন্ত করপোরেশনের দাসে পরিণত হবেন।
সুবিধা হবে বড় সংস্থাগুলোর। কয়েক বছরের মধ্যে কৃষিতে তাদের মনোপলি প্রতিষ্ঠা হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বারবার দাবী করা হচ্ছে, এতে আদতে কৃষকদের লাভ হবে। কারণ, তারা বেশী দামে জিনিস বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকদের দাবী, তাহলে ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যে ফসল কেনা বাধ্যতামূলক করা হোক। সেই দাম না দিলে করপোরেশনগুলোকে শাস্তি পেতে হবে, সেই ব্যবস্থা আইনে রাখা হোক। তবে সরকার ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যকে আইনি রূপ দিতে রাজি নয়।❐