Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
November 10, 2024
হেডলাইন
Homeআন্তর্জাতিকমারা গেলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ

মারা গেলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ

মারা গেলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ

বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা, জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠা স্যার ফজলে হাসান আবেদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। 
স্যার ফজলে হাসান আবেদ আজীবন কাজ করেছেন মানুষের কল্যাণে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ব্রিটিশ সরকারের নাইট উপাধি পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি ফজলে হাসান আবেদ গত ২৯ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি ব্রেন টিউমারে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি এক ছেলে, এক মেয়ে এবং অসংখ্য অনুসারী, সুহৃদ, শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
শুক্রবার রাত ৯টা ৫ মিনিটে ব্র্যাকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসা যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি স্যার ফজলে হাসান আবেদ, প্রিয় আবেদ ভাই, আর আমাদের মাঝে নেই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই মুহূর্তে, কোনো সমবেদনা বা সান্ত্বনার ভাষাই তাকে হারানোর কষ্ট কমাতে পারবে না। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে শান্ত থাকা ও এগিয়ে যাবার শিক্ষাই তিনি সবসময় আমাদের দিয়েছেন। জীবনভর যে সাহস আর ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি আমরা তার মাঝে দেখেছি, সেই শক্তি নিয়েই আমরা তার স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান জানাব।’
বিবৃতিতে জানানো হয়, রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় সেখানে তারা জানাজা হবে। জানাজার পর ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
স্যার ফজলে হাসানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন স্মরণ করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে ৩৬ বছর বয়সে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন ফজলে হাসান আবেদ। এটি এখন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)। ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই বছর ব্র্যাকের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন ফজলে হাসান আজাদ। গত আগস্টে এই পদ থেকে অবসরে যান তিনি। এরপর তিনি ব্র্যাকের ইমেরিটাস চেয়ারপারসন নিযুক্ত হন। আমৃত্যু তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কীর্তিমান মানুষ তিনি। স্বাপ্নিক, দূরদৃষ্টি, অদম্য একাগ্রতা ও গতিশীলতা নিয়ে রয়েছেন এই দেশ, মাটি, মানুষের সঙ্গে।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১টি দেশে ব্র্যাকের এক লাখ ২০ হাজার কর্মী পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছেন ১৪ কোটি মানুষের জীবন। দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফজলে হাসান আবেদকে ২০১০ সালে ব্রিটেনের অন্যতম সম্মানজনক ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ২০১১ সালে অর্জন করেন কাতার ফাউন্ডেশন প্রবর্তিত শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘ওয়াইজ প্রাইজ’। এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
ফজলে হাসান আবেদ পাবনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচার বিষয়ে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তার প্রফেশনাল কোর্স শেষ করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফিরে ফজলে হাসান আবেদ শেল অয়েল কোম্পানিতে যোগ দেন এবং দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ সময় তিনি শেল অয়েল কোম্পানিতে কর্মরত থাকলেও বন্ধুদের নিয়ে ‘হেলপ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে ঘূর্ণি-উপদ্রুত মনপুরা দ্বীপের অধিবাসীদের পাশে দাঁড়ান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় ফজলে হাসান আবেদ ইংল্যান্ডে গিয়ে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি এ সংগঠনের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনে কাজ করার উদ্যোগ নেন।
এ সময় তিনি তার লন্ডনের ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেন এবং সেই অর্থ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শাল্লা এলাকা থেকে ‘বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিস্ট্যান্স কমিটি’ বা ব্র্যাকের যাত্রা শুরু হয়। পরের বছর ত্রাণ তৎপরতার গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে তার নেতৃত্বে এটি বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্স কমিটি বা ব্র্যাক নামে অভিযাত্রা শুরু করে।
বিশ্ব জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান এবং দরিদ্র মানুষের সুরক্ষায় কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য স্যার ফজলে হাসান আবেদ ২০১৬ সালে ‘টমাস ফ্রান্সিস জুনিয়র মেডেল অব গ্লোবাল পাবলিক হেলথ’ পদক পান। খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৫ সালে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, ২০১৪ সালে লিও তলস্তয় আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক ও ২০১৩ সালে হাঙ্গেরির ‘সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি’ (সিইইউ) প্রদত্ত ‘ওপেন সোসাইটি প্রাইজ’ পান। ২০১৪ সালে তিনি স্পেনের সর্বোচ্চ বেসামরিক নাগরিক সম্মাননা ‘অর্ডার অব সিভিল মেরিট’ পান।
তিনি ২০০৭ সালে প্রথম ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন অ্যাওয়ার্ড, ২০০৪ সালে মানব উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় ইউএনডিপি মাহবুবুল হক মানব উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড, ২০০১ সালে ওলফ পাম অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯২ সালে ইউনিসেফ মরিস পেট অ্যাওয়ার্ড, ১৯৮০ সালে র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফর কমিউনিটি লিডারশিপ লাভ করেন।
তিনি অশোকার সম্মানজনক গ্লোবাল একাডেমি ফর সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এ ছাড়াও তিনি সম্মানসূচক একাধিক ডিগ্রি পেয়েছেন। যুক্তরাজ্যের অপফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডক্টর অব লেটার্স (২০০৯), যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব ল (২০০৮), ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব হিউম্যান লেটারস (২০০৭), প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি (২০১৪), যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি (২০১২), বাথ ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ (২০১০), কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজে (১৯৯৪) ভূষিত হন।
চলতি বছরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে কয়েক দশকব্যাপী অনবদ্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ নেদারল্যান্ডসের নাইটহুড ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অব অরেঞ্জ-নাসাউ’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। একই বছরে শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ে অত্যন্ত মর্যাদাসূচক এবং অর্থমূল্যের দিক থেকে সবচেয়ে বড় পুরস্কার ইদান প্রাইজ লাভ করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। হংকংভিত্তিক ইদান প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ পুরস্কার ঘোষণা করে।
২০১৮ সালে প্রাকশৈশব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ লেগো ফাউন্ডেশন, ডেনমার্ক প্রদত্ত লেগো পুরস্কার পান তিনি।
Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment