মেসেঞ্জারে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পাঠান জবি ছাত্রলীগ নেতা
চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগের পর এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আকতার হোসাইন তার নিজ মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এমসিকিউর উত্তর অন্যজনকে প্রদান করেন। উত্তরপত্রের অধিকাংশই ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে মিল রয়েছে।
তার মেসেঞ্জারের বার্তায় দেখা যায়, যিনি উত্তর নিচ্ছেন তিনি আক্তারকে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুরোধ জানান। জবাবে আক্তার সব প্রশ্ন দিয়েছেন বলে ফিরতি বার্তায় জানান। সেই সাথে এটি কাউকে না জানানোর অনুরোধ করেন।
এক অডিও ক্লিপে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে কথা বলার সময় ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম উঠে এসেছে। ওই অডিও ক্লিপে শোনা যায়, কাকন মিয়া নিজেকে আকতারের আপন মামাতো ভাই পরিচয়ে অপর পাশের ব্যক্তিকে পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছেন এবং কল রেকর্ড যাতে ফাঁস না হয় সেসব ব্যাপারে সতর্ক করেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কাকন মিয়াকে প্রশ্ন করা তিনি ফোন কেটে। পরে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার দাবি করেন আকতার হোসাইন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, তাহলে আমার আপন ছোট ভাইতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা ছিল। সে প্রাইভেটে পড়ছে কেন? আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে কথাগুলো বলছেন এর কোনো প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে আকতারের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতারা। ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, ভর্তি বাণিজ্য, জালিয়াতি, টেন্ডার বাণিজ্য এসব তো ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য না। যারা এসব করবে তারা অন্য কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত হোক। তারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এসব অপরাধ করে সংগঠনের সুনাম নষ্ট করছে।
জবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহ-সভাপতি মিঠুন বাড়ৈ বলেন, সাধারণ সম্পাদক আকতার দীর্ঘদিন যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতি এবং বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহ-সভাপতি হাবুল হোসেন পরাগ বলেন, একের পর এক বিতর্কিত কাজ করে সংগঠনকে কলুষিত করেই যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। জবি ছাত্রলীগ ইব্রাহিম ও আকতারের কাছে ইজারা দেওয়া হয় নাই। ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না। সংগঠনের মান ক্ষুণ্ণ করে যখন কেউ প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর অপরাধের সাথে জড়িত হয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
অপরাধে জড়িত থাকলে আকতারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তিনি বলেন, ‘অভিযোগটা এসেছে। যাচাই-বাছাই চলতেছে। অনুসন্ধান করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা এবং আদর্শ বিরোধী কর্মকাণ্ড কেউ পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি মো. ইব্রাহীম ফরাজিকে সভাপতি ও এসএম আকতার হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।