Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
September 8, 2024
হেডলাইন
Homeআন্তর্জাতিকরাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যুদ্ধক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ

রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যুদ্ধক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ

রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যুদ্ধক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ

বহুদিন ধরেই চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করছে বাংলাদেশ। নয়া দিল্লি এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিং-এর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতা রয়েছে। কিন্তু এখন মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঢাকার নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশ চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে এবং একইসঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে থাকা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ যতদিন ধরে চলবে এই ভারসাম্য বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য তত কঠিন হয়ে উঠবে। গত মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গুমের শিকার এক ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছানোর পর অসংখ্য মানুষ বিক্ষোভ শুরু করেন।

তারা দাবি তোলেন, সাবেক বিএনপি সরকারের সময় যারা গুম হয়েছিলেন তাদের বিষয়েও যেন ওয়াশিংটন তদন্ত করে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসতে বাধ্য হন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সে সময় রাষ্ট্রদূতের এমন হয়রানির বিষয়ে কড়া বিবৃতি দেয় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। বাংলাদেশ সরকারের কাছেও যে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে তা ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

মূলত এই বিবৃতির জেরেই শুরু হয় ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যেকার বাকযুদ্ধ। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওই সফরের পর ঢাকায় অবস্থিত রুশ দূতাবাস এক বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর নিন্দা জানায়। রুশ দূতাবাসের এমন জবাবের পাল্টা জবাব দেয় যুক্তরাষ্ট্রও। টুইটারে মার্কিন দূতাবাস থেকে দেয়া এক পোস্টে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয় যে, ‘ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য কিনা?’ বাকযুদ্ধ এখানেই থেমে থাকেনি। মার্কিন দূতাবাসের টুইটের জবাবে পাল্টা টুইট করে রুশ দূতাবাস। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করা একটি কার্টুন প্রকাশ করা হয়। যদিও বাংলাদেশ চাইলেই এই দুই পরাশক্তির টুইটার যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে পারে কিন্তু চাইলেই পররাষ্ট্রনীতির সংকট এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়।

গত ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান মুখপাত্র পিটার হাসের ওই সফরকে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আন্তর্জাতিক নীতির লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেন। বাংলাদেশে রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। উরসা মেজর নামের রাশিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে ২৪শে ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু মার্কিন দূতাবাস ঢাকাকে জানায় যে, এই জাহাজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ, এই জাহাজ যে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত তা রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ব্যবসা করে। এরপর বাংলাদেশ যথারীতি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখে। ঢাকা ওই রুশ জাহাজকে মোংলা বন্দরে আসার অনুমতি দেয়নি। তবে একইসঙ্গে ঢাকা জানায় যে, তারা ভিন্ন আরেকটি জাহাজে করে রুশ জাহাজে থাকা পণ্য নিয়ে আসবে।

বেনার নিউজ জানিয়েছে, ওই রুশ জাহাজটি সাময়িকভাবে ভারতে অবস্থান করেছিল। বাংলাদেশ এভাবেই ওয়াশিংটন এবং মস্কো উভয়কে ছাড় দিয়ে নিজের নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলেছে। তবে দুই পক্ষই যদি বাংলাদেশকে চাপ দিতে থাকে তাহলে এই নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমারেও ওয়াশিংটন ও মস্কোর লড়াই চলছে এবং ঢাকার উপরেও এর প্রভাব পড়তে পারে। রাশিয়া মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে সমর্থন করে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক শাসনের অবসান চায়। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও সুবিধার নয়। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এখন তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায় ঢাকা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহীদের লড়াই দিন দিন তীব্র হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তেও এর প্রভাব এসে পড়ছে। প্রথমে মনে হয়েছিল, চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য রাখা বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে।

চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে মস্কোর থেকে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের বেশি ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশি পণ্যের সবথেকে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে। অপরদিকে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মূলত জ্বালানি, সমরাস্ত্র ও পরমাণু শক্তি সম্পর্কিত। যে কোনো দেশের কাছেই জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে প্রায়ই মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।

ফলে রাশিয়া যেভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে তা আওয়ামী লীগকে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশ যে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে দিতে চায়না তা যদিও আগে থেকেই স্পষ্ট ছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরুতে ইউক্রেনীয় বন্দরে থাকা একটি বাংলাদেশি জাহাজে মিসাইল হামলা হয়। ইউক্রেনের অভিযোগ, এই মিসাইল রাশিয়ার ছোঁড়া। বাংলাদেশ সে সময় এ নিয়ে একদম চুপ ছিল। যাইহোক, পিটার হাসের সামপ্রতিক ওই সফর নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের এই কাদা ছোড়াছুড়ি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বার্তা। এটি মনে করিয়ে দেয় যে, বড় শক্তিগুলোর যুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশের মতো নিরপেক্ষ দেশগুলোকে টেনে আনা একটি বড় ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে।

ফরেন পলিসিতে প্রকাশিত নিবন্ধের অনুবাদ, দৈনিক মানবজমিনের সৌজন্যে

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment