Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
November 21, 2024
হেডলাইন
Homeঅর্থনীতিরিজার্ভ কতটা গুরুত্বপূর্ণ

রিজার্ভ কতটা গুরুত্বপূর্ণ

রিজার্ভ কতটা গুরুত্বপূর্ণ

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বলতে কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বা মুদ্রাবিষয়ক কর্তৃপক্ষের কাছে বৈদেশিক মুদ্রায় গচ্ছিত সম্পদের মজুতকে বোঝায়। এভাবে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রধানত আমদানি মূল্য এবং বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের সুদ ইত্যাদি পরিশোধে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত বেশির ভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমা রাখে। এছাড়া ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো, চীনা রেনমিনবি, জাপানি ইয়েন, ব্রিটিশ পাউন্ড, সুইস ফ্রাঁও জমা রাখা হয়।

এর সঙ্গে স্বর্ণের মজুত, স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) রিজার্ভ পজিশনও হিসাবে ধরা হয়। আমদানি ব্যয় মেটানো, দেশের আর্থিক বিপর্যয় মোকাবিলা, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন রোধ, মুদ্রানীতি শক্তিশালীকরণ, বাজেট বাস্তবায়ন, বৃহত প্রকল্পে অর্থের জোগানসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করতে এ ধরনের রিজার্ভ হাতে রাখে যে কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সাধারণত শক্তিশালী বা অনমনীয় মুদ্রা, যা আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে বিনিময়যোগ্য, ইংরেজিতে যাকে বলে হার্ড কারেন্সি, সেটিতেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুত গড়ে তোলা হয়। যেমন ডলার, ইউরো, পাউন্ড ইত্যাদি। কোনো দেশ স্বীয় দেশেরই কোনো ব্যাংকে বা বিদেশে অবস্থিত কোনো ব্যাংকেও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংরক্ষণ করতে পারে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছাড়া একটি দেশ জ্বালানি তেল, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধের মতো জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারে না। একটি দেশের বিদেশি ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয় রিজার্ভ থেকে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মুদ্রার বিনিময় হারকেও নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার মাধ্যমে মুদ্রার বিনিময় হার ঠিক রাখে। আবার সংকটকালে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস জোগায় রিজার্ভ।

মূলত পণ্য ও সেবা রপ্তানি এবং বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের স্বদেশে পাঠানো অর্থ ইংরেজিতে যাকে রেমিট্যান্স বলে, তা থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত গড়ে ওঠে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বৈদেশিক ঋণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের অর্থ।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কোনো দেশে তিন মাসের মোট আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকলে সেটা মোটামুটি নিরাপদ। আবার দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমে থাকাও অর্থনীতির জন্য ভালো নয় বলে মনে করা হয়। কারণ, অতিরিক্ত রিজার্ভ অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আশানুরূপ না হওয়াকেই ইঙ্গিত করে। তবে সার্বিকভাবে রিজার্ভকে অর্থনীতির জন্য একধরনের ইনসিওরেন্স হিসেবে দেখা হয়, যা আপত্কালীন ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোন দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সবচেয়ে বেশি এবং কোন দেশগুলো কম রিজার্ভ ও ঋণ নিয়ে ধুঁকছে, তা দেখা যাক। প্রসঙ্গত, একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কোনো ফিক্সড বা নির্ধারিত বিষয় নয়, যে কোনো সময় তা পরিবর্তন হতে পারে। সাধারণত বিশ্বের অনেক দেশই রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে রক্ষণশীল অবস্থানে থাকে।

গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনা মহামারি এবং পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতি। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ছে, নিত্যপণ্যের দাম চলে যাচ্ছে হাতের নাগালের বাইরে। হঠাৎ আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় টান পড়েছে বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। মুদ্রাস্ফীতিতে নাজেহাল ধনী দরিদ্রসহ সারা বিশ্বের মানুষ। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

সম্প্রতি লক্ষ্য করা যায়, বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। অধিকাংশ দেশ যেহেতু ডলারে রিজার্ভ করে সুতরাং এ ডলারেরও সংকট তৈরি হয়েছে। চীন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের কমবেশি প্রায় সব দেশে বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে। বেশির ভাগ বৈদেশিক বাণিজ্যই পরিচালনা করা হয় ডলারে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় করে, যা এই গ্রহের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। পরিসংখ্যান দেখায়, বিশ্বের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে চীনের কাছে। ২০২২ সালের জুনে দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৯ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছর একই সময়ের তুলনায় চীনের রিজার্ভ অবশ্য অনেকটাই কমেছে। সে সময় তাদের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি ডলারের। একই অবস্থা শীর্ষ ১০-এ থাকা বাকি দেশগুলোরও। বর্তমানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিজার্ভ জাপানের। তাদের হাতে রয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ১২৫ কোটি ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে দেশটির রিজার্ভ ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। তৃতীয় সুইজারল্যান্ডের, বর্তমান রিজার্ভ ১ লাখ ৪ হাজার ২৬৬ কোটি ডলার। গত বছর এ সময়ে ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি ডলার। বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ভারতের। এ বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ছিল ৫৭ হাজার ২৭১ কোটি ডলার। আর গত বছর ছিল ৬১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এখানে লক্ষণীয়, বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র রিজার্ভের দিক থেকে শীর্ষ দশে নেই। রিজার্ভ তুলনামূলক কম ২৪২ বিলিয়ন বা ২৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যার বেশির ভাগই রয়েছে ইউরো ও ইয়েনে। এ তালিকায় বিশ্বের মধ্যে তাদের অবস্থান ১৩তম। গত বছর অবশ্য ১৪ হাজার ২২১ কোটি ডলার হাতে রেখে তাদের অবস্থান ছিল ২১তম। অর্থাৎ বিগত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ডলারের রিজার্ভ প্রচুর বেড়েছে।

শীর্ষ ১০-এ থাকা বাকি দেশগুলোর বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ যথাক্রমে রাশিয়ার ৫৬ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার (গত বছর ছিল ৫৯ হাজার ২৪০ কোটি ডলার), তাইওয়ানের ৫৪ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলার (গত বছর ৫৪ হাজার ১১১ কোটি ডলার), হংকংয়ের (চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) ৪৬ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার (গত বছর ৪৯ হাজার ৬০ কোটি ডলার), সৌদি আরবের ৪৫ হাজার ৬৭ কোটি ডলার (গত বছর ৪৪ হাজার ৭৩ কোটি ডলার), দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৩ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার (গত বছর ছিল ৪৫ হাজার ২৩০ কোটি ডলার) এবং ব্রাজিলের ৩৪ হাজার ৯৫ কোটি ডলার (গত বছর ছিল ৩৬ হাজার কোটি ডলার)। এই পরিসংখ্যানে এটা স্পষ্ট যে, কত ডলার রিজার্ভ থাকা নিরাপদ সেটি আরেক দেশের সঙ্গে তুলনা করা যাচ্ছে না। কারণ ফেডারেল রিজার্ভ সুদ হার বাড়ানোর পর এখন ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই বৈদেশিক অর্থ প্রবাহ ধাবিত হবে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকা, বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ ও সুদ বাড়তে থাকা, একদিকে ডলারের তুলনায় নিজস্ব মুদ্রার মান পড়ে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির চোখরাঙানি কিছু উন্নয়নশীল দেশকে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে ফেলেছে। অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, আগামী বছর এ ধরনের সংকট তীব্রতর এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। খাদ্য পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়াতে হবে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রিজার্ভ ভয়াবহভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ও রিজার্ভ শূন্যের কোঠায় চলে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা, লেবানন খেলাপি ঋণের দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে তীব্র অর্থনৈতিক এবং রিজার্ভ সংকটে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, মিশর, এল সালভাদর, ইথিওপিয়া, ঘানা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, তিউনিসিয়া, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় খেলাপি দেশটির নাম আর্জেন্টিনা। দেশটির কাছে আইএমএফের পাওনা ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি। এর পরই রয়েছে মিশর, তাদের ঋণের পরিমাণ ১৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছরের মে মাসেও বাংলাদেশে ব্যাংকের ৪২ বিলিয়ন ডলারের শক্তিশালী রিজার্ভ ছিল যা বর্তমানে ৩৪ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে। একদিকে আমদানি বৃদ্ধি অন্যদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় ক্রমেই রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে-ই আমদানি হ্রাসে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে অনেক দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তা বিপজ্জনক মাত্রায় চলে এসেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো আভাস দিচ্ছে যে, আগামী বছর বৈশ্বিক আর্থিক সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment