রোহিঙ্গা রক্ষায় আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের আহ্বান
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা গণহত্যা থেকে রাখাইনের সংখ্যালঘুদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল এক বিবৃতিতে বলেন, আদালতের বিধিবদ্ধ আইন ও সনদের অধীন বাধ্যবাধকতা তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্তভাবে রীতিমাফিক পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বৃহস্পতিবারের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল জাতিসংঘের মহাসচিব বলে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীন আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ মেনে চলতে মিয়ানমার বাধ্য।
এদিকে গণহত্যা থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সুরক্ষায় নিজের ক্ষমতার ভেতর থেকে মিয়ানমারকে সব পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আদেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত।
বৃহস্পতিবার দ্য হেগ শহরে আদালতের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ এমন কথা জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায়) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের আদেশ ঘোষণা করেন।
১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়ার অনুরোধ সাপেক্ষে বেশ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ মঞ্জুর করেন আদালত।
এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন চালানো হয়েছে, তার প্রমাণ সংরক্ষণ করতেও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গণহত্যা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার যে আবেদন গাম্বিয়া করেছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।
আদালত বলেছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা— সেই বিচারের এখতিয়ার জাতিসংঘের এ আদালতের রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশনের ভিত্তিতে এ মামলা করার মতো প্রাথমিক অধিকারও গাম্বিয়ার আছে।
‘জাতিসংঘ তথ্য অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনে যেসব বিবরণ উঠে এসেছে; তার আলোকে গাম্বিয়া মিয়ানমারকে যে নোট ভারবাল দিয়েছিল তা বিরোধের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য।’
এ বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার নেই বলে মিয়ানমার যে দাবি তুলেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এই বিচারপতি। সনদের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর আওতায় (ধারা ৮ ও ৯) এ মামলা দায়েরের গাম্বিয়ার প্রাইমা ফেসি অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত।
আদালত মনে করেন, গণহত্যা সনদের ধারা ২-এর আলোকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী একটি বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী (প্রোটেক্টেড) গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচ্য।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর ওই মামলার ওপর শুনানি হয়। তাতে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অন্যদিকে মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সুচি।
আবুবকর তামবাদু শুনানিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।
নৃশংসতার জন্য দায়ী সেনা সদস্যদের বিচার ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখা যায় না বলে মন্তব্য করে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীবালীন নির্দেশনা চান গাম্বিয়ার প্রধান কৌঁসুলি পল রিখলার।
অন্যদিকে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে সু চি দাবি করেন, রাখাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে গাম্বিয়া যে চিত্র আদালতে উপস্থাপন করেছে, তা অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর।
২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।