সনদ সর্বস্ব শিক্ষায় দেশের উন্নয়ন অসম্ভব: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করতে হবে। সনদ সর্বস্ব শিক্ষা দিয়ে দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব না। এখানে তারা রাজনীতির অনুশীলন ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করেন। এজন্য ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত। শিক্ষক সমাজ নিজেদেরকে দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে রাখবেন।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এসময় তিনি আরো বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে বাস্তবিক জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করতে পারলে তবেই সেই শিক্ষা সফল হয়েছে বলে বলা যায়। আর শিক্ষার্থীদের মূল কাজ লেখাপড়া ও জ্ঞান অর্জন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
সমাবর্তনের প্রধান বক্তা প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যত পরিবর্তন এসেছে,তার প্রায় সবগুলোর কারিগর ছিল তরুণ সমাজ। আমাদের এই মাতৃভূমিতে পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহস, ঐক্য ও ইচ্ছাশক্তির অনুপম দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে ছাত্রসমাজ। আমাদের পূর্বসূরীরগণ এমন একটি সমাজ বিনির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন যেখানে সর্বক্ষেত্রে সমতা বিরাজ করবে। এসময় তিনি সকলকে অধ্যবসায় ও নিষ্ঠার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১৫ হাজার ২১৯ জন গ্র্যাজুয়েট অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বিকেল সাড়ে তিনটায় সমাবর্তন শোভাযাত্রাসহ আগমন করেন রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর (আচার্য) মো. আবদুল হামিদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ এর সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. নূরুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি-প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার।
সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। স্নাতক ক্যাটাগরিতে আটজনকে ‘আসাদুল কবীর স্বর্ণপদক’ ও স্নাতকোত্তর ক্যাটাগরিতে সাতজনকে ‘শরফুদ্দিন স্বর্ণপদক’ দেয়া হয়। এছাড়া দর্শন বিভাগের সর্বোচ্চ ফলাফলধারী এক জনকে মোফাসসিল উদ্দিন আহমেদ ট্রাস্টফান্ড স্বর্ণপদক’ দেয়া হয়। স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের কামরুন নাহার (২০১৭), পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শরিফুল ইসলাম (২০১৩), মোছা. শামীমা খানম (২০১৪) ও বদরুন্নাহার দীপা (২০১৮), পরিসংখ্যান বিভাগের মুহাম্মদ খায়রুল আলম (২০১৯), ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের উর্মি দাস (২০১৫), অর্থনীতি বিভাগের ইসতিয়াক রায়হান (২০১৬), মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তানজিনা আক্তার (২০১২) ও মুমতারিন জান্নাত ঐশী (২০১৬), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) রাতুল কুমার সাহা (২০১৩), বি এম মুহিত সাঈফ (২০১৮) ও রাদিআহ হাসান (২০১৯), ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ফারিহা আফসানা (২০১৪), প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের উম্মে মাহফুজা শাপলা (২০১৫), ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের জান্নাতুল হুসনা তুয়া (২০১৭) ও দর্শন বিভাগের সাথী আক্তার (২০১৮)।
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৫২ বছরের ইতিহাসে এর আগে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে পাঁচবার। সর্বশেষ ২০১৫ সালে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সময়ে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেইবার নয় হাজার গ্র্যাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীদের মধ্য থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থীকে ২৩টি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।