সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা উদযাপিত
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব সোমবার উদযাপিত হয়েছে। আবির আর রং উৎসবের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার দোলযাত্রা উদযাপন হয়।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এদিন রং খেলায় মেতেছিলেন। দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে ভক্তরা একই সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার কাছে ন্যায়ের বিজয় ও অন্যায়ের বিনাশ প্রার্থনা করেছেন। আয়োজনে ছিল পূজা ও কীর্তন ছাড়াও নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানও।
করোনাভাইরাসের কারণে এবার রাজধানীতে সীমিত আকারে এই উৎসব হয়েছে।
তবে রং খেলার আয়োজন ছোট আকারে হলেও বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।
পঞ্জিকা মতে, দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধা ও তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন।
সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রঙ খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন। কোনও কোনও স্থানে এই উৎসবকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়।
বিশ্বের অনেক দেশে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারত ও নেপালে ‘হোলি’ নামে পরিচিত।
দ্বাপর যুগ থেকে পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির।’
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সকাল থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দোল উৎসব শুরু হয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঠাকুরের পায়ে আবির মাখিয়ে এ উৎসব শুরু করেন। এরপর পরস্পরের সঙ্গে আবির বিনিময় করেন।
তবে অন্যান্য বারের মতো নগরীতে রং খেলা দেখা যায় নি। দোল যাত্রা উপলক্ষে মন্দিরে পূজা ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, এবার শুধু ঠাকুরের পায়ে আবির দিয়েই দোল পূর্ণিমার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়েছে। কোনও ধরনের রঙ খেলার আয়োজন করা হয় নি।
করোনাভাইরাসের কারণে কমিটির বৈঠকে রং খেলার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।
বরাবরের মতো এ বছরও দোল উৎসবের মূল আয়োজন হয় ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে সেখানে সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ভজন কীর্তন, আবির খেলা ও হোমযজ্ঞ শেষে ছিল প্রসাদ বিতরণ। মন্দিরের নিত্য পুরোহিত তপন ভট্টাচার্য ও বরুণ চক্রবর্তী ধর্মমত নির্বিশেষে সবার মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেন। পূজা শেষে দুপুর ১২টায় প্রসাদ বিতরণ করা হয় ভক্তদের মধ্যে। রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নান করিয়ে ভক্তরাও রং খেলায় মেতে ওঠেন। রঙের ডালা আর পিচকারি হাতে তরুণ দলের এ উৎসব চলেছে দিনভর।
রঙ ছিটিয়ে, নিজের বন্ধু-বান্ধবী ও সহপাঠীদের গায়ে-মুখে রং মেখে আবির উৎসবে (হোলি) মেতেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরাও। দুপুরে চারুকলার বকুলতলায় রং মেখে উৎসব শুরু হয়। পরে শিক্ষার্থীরা ঢাকঢোলের তালে উৎসবের র্যালি বের করেন। ♦