সন্তানের মতো ভাইয়ের জন্যে শোক, ফাহিম
রুবি অ্যাঞ্জেলা সালেহ
মূল ইংরেজি রচনাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন
১৪ ই জুলাই রাত ১০:৪৭। আমার ফোনটা বেজে উঠল। আমি বিছানায় শুয়ে। স্বামীর পাশেই। একটু তন্দ্রা মতো এসেছিল , কিন্তু ফোনটা ধরলাম। কারণ খালার ফোন, নিউ ইয়র্ক থেকে। ‘আমার কাছে খুব খারাপ খবর আছে’, তাকে খুব ভীতু মনে হচ্ছিল, ফোনে তিনি সবকিছু খুলে বলতে চাইছিলেন না। তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের পরিবারের কারোর ভীষণ খারাপ কিছু একটা ঘটেছে। আমার কাঁধ শক্ত হয়ে গেল আর শরীরের বাকি অংশগুলো অবশ হয়ে যাচ্ছিল। আমার বাবা-মা কারও কি কোভিড হয়েছে?
‘হয়েছেটা কি’ আমি জিজ্ঞেস করতেই থাকলাম ‘বল, কি হয়েছে?’ আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি ফোনটা স্পিকারে রাখলাম যেন আমার স্বামীও শুনতে পান।
‘খুবই খারাপ খবর’ খালা বললেন।
‘তুমি শুধু বল, খালা। কার কী হয়েছে?’
‘ফাহিম আর আমাদের মাঝে নেই’,বললেন তিনি।
তার এ কথার কোনও মানে হয় না। ‘কী বলছ তুমি?’ কীভাবে আমার ৩৩ বছরের সুদর্শন তরতাজা, উচ্ছল, সৃষ্টিশীল ছোট্ট ভাইটা ‘আর আমাদের মাঝে’ না থাকতে পারে?
তখন তিনি বললেন, ‘কেউ তাকে মেরে ফেলেছে’।
আমি তীক্ষ্ম আর্তনাদ করে উঠলাম, ‘তুমি এসব কী বলছ?’
খালার সঙ্গে কথা শেষ করে বোনকে ফোন করলাম। সে আমার নাম ধরে চিৎকার করে কেঁদে ফেলল। সে তখন গোয়েন্দাদের সঙ্গে ছিল তাই বেশীক্ষণ কথা বলতে পারল না। বোন জানাল, ‘আমরা কদিন ধরে ফাহিমের কোনও ফোন পাচ্ছিলাম না, তাই কথা ‘ক’ ওর অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিল খোঁজ নিতে।’ ও বলল, ক কথা আমাদের ৩০ বছর বয়সী কাজিন। গাড়ি চালানোর বয়স হওয়ার আগেই একজন সফল প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ফাহিমই তাকে কোডার (বার্তাকে সাংকেতিক চিহ্নে রূপান্তর করতে পারেন যিনি) হতে উৎসাহ যুগিয়ে ছিল। ‘ক বসার ঘরে ফাহিমের ধড়টি খুঁজে পায়,’ আমার বোন বলল। ‘আমাকে যেতে হচ্ছে, আমি গোয়েন্দাদের সঙ্গে আছি।’
আমার হাত থেকে কাঠের মেঝেতে ফোনটা পড়ে গেল। আমি হামাগুড়ি দিতে দিতে হাতের তালুতে ঠান্ডা কঠিন মেঝের স্পর্শ নিতে লাগলাম। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ‘না, না,’ বলতে থাকলাম, আমার চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে মুখের ওপর এসে পড়েছিল। ‘ওরা এসব কী বলছে?’ বলে আমার স্বামীর দিকে তাকালাম, সে কাঁদছিল, যেন সে আমার ভাই সম্পর্কে বলা কথাগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। আমার কাছে এই কান্নার কোনও অর্থ নেই কারণ এই সংবাদ খবর কোনভাবেই সত্যি হতে পারে না।
পরদিনই আমি আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউ ইয়র্ক ছুটে গেলাম। আমার ভাইয়ের হত্যার খবরে পরিপূর্ণ ইন্টারনেট শিরোনামগুলো। ‘ম্যানহাটন অ্যাপার্টমেন্টে সিইও’র খণ্ডবিখণ্ড দেহ‘, একজন পড়েছিল। ‘এনওয়াইসি পুলিশ মস্তকবিহীন, অঙ্গহীন শরীর খুঁজে পেয়েছে বৈদ্যুতিক করাতের পাশে’, আরেকজন এভাবে পড়ল।
তারা আমার ছোট ভাইটার কথা বলছিল, আমার ফাহিমের কথা। ফাহিম, আমার আট বছর বয়সে, আমার বাবা-মা যাকে একটা কমলা রঙের কম্বলে জড়িয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় আমার কাছে নিয়ে আসে।
আমরা যতই বড় হচ্ছিলাম, আমি যেন ধীরে ধীরে ফাহিমের বোনের থেকেও বেশী, মায়ের মতো হয়ে উঠছিলাম। ও যখন বন্য দুরন্তপনায় খাবার শেষ না করেই উঠে পড়ত, আমি তখন চামচ ভর্তি ভাত আর মুরগি নিয়ে ওর পেছনে পেছনে ছুটতাম। ওকে গোসল করাতাম, ওর ডায়াপার বদলে দিতাম। প্রথমবার যখন ওর নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখি আমি আতঙ্কে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। ওর ছোট্ট হলুদ শার্টে রক্তের ধারা দেখে আমি ভেবেছিলাম, ফাহিমের খুব ভয়াবহ কিছু একটা হয়েছে। তখন ওর বয়স তিন, আমার এগারো। ত্রিশ বছর পরে, আমি শুনলাম, ফাহিমের মাথা এবং শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো আবর্জনার ব্যাগে করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমার ভাইয়ের শরীরটাকে কেউ টুকরো টুকরো করে কেটেছে তারপর টুকরোগুলোকে আবর্জনার ব্যাগে ভরেছে, যেন তার জীবনের, তার শরীরের, তার অস্তিত্বের কোনও অর্থ অথবা মূল্যই নেই।
বন্ধুদের থেকে অবিরাম মেসেজ আসা শুরু হলো। ‘কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না,’ অধিকাংশ এভাবেই শুরু হয়েছিল।
‘হায় খোদা, আমার আদরের মিষ্টি ছোট্ট ভাইটাকে কে এটা করতে পারল?’ আমি আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘এটা এখনও একটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে, কিছুক্ষণ পরেই হয়ত জেগে উঠব… আমার ছোট্ট বাবুটা।’
প্রথম কয়েকটা দিন আমরা যতটা পারলাম বাবা-মাকে এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখলাম, কিন্তু আমার বোনের সঙ্গে আমার কথাবার্তা ছিল খোলামেলা। আমাদের ভাবনাগুলো একইরকম ছিল। ফাহিম কী ভয় পেয়েছিল? সে কী তার জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল? সে কী অনেক যন্ত্রণা ভোগ করেছিল? যদি ভুগেই থাকে, তবে সেটা কতখানি? আমরা মনে করেছিলাম আমরা সবটা জানতে চাই, কিন্তু সত্যিকারে আমরা যেটা চাইছিলাম সেটা হলো, ফাহিমের শেষ সময়টাতে সে আদৌ কোনও যন্ত্রণা ভোগ করে নি অথবা আতঙ্কিত হয় নি, খুব দ্রুত এবং শান্তিতে সে চলে গেছে। আমি যদি তাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারতাম, তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতাম, আর সবকিছু ঠিকঠাক করে দিতে পারতাম।
ফাহিমের খবরটা শোনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে, আমি আমার বোন এবং কাজিনের সঙ্গে ওর ফুলের বিছানার চাদর পাতা লোহার ঢালাই বিছানায় বসেছিলাম, তখনই সৎকারের আয়োজকদের থেকে একটা ফোন এল। লাইনের অপর প্রান্তের লোকটা বলছিল, কোভিডের কারণে তার পাঠানো ছবির মাধ্যমে আমাকে আমার ভাইয়ের দেহ সনাক্ত করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার মেসেজের নোটিফিকেশন এসে গেল। আমার শরীর অবশ হয়ে আসছিল। ‘এসে গেছে,’ আমি ওদের বললাম। আমার বোন, কাজিন এবং আমি হাত ধরে থাকলাম এবং অ্যাটাচমেন্টটা খোলার আগে প্রার্থনা করলাম। ঠিক সেটাই ছিল। আমার সুদর্শন ভাইয়ের একটা ছবি, নির্জীব।
আমার বোন হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, ‘না,না, না, এটা এখন বাস্তব, এটা এখন সত্যি হলো,’ সে বারবার একই কথা বলতে থাকল।
আমি ওকে শক্ত করে ধরে থাকলাম। আমি ছবিটাকে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম, আমার আদরের ভাইটাকে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম, ‘কীভাবে এসব হল, বাবুটা?’ আমি কম্পিউটার স্ক্রিনে আঙুল দিয়ে ওর মুখে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম, আমার গাল বেয়ে কান্না গড়িয়ে পড়তে লাগল। আমি শুধু ওকে বলতে চেয়েছিলাম, ‘আমি ভীষণ দুঃখিত, ফাহিম, আমি ভীষণ দুঃখিত। আমার বেচারা, মিষ্টি ভাইটা, আমার জান।’
বাবা আমাদের কান্না শুনতে পেয়ে দরজায় কড়া নাড়লেন, জানতে চাইলেন কী হয়েছে। আমরা দ্রুতবেগে কমপিউটার বন্ধ করে দিলাম, আমাদের কান্না মুছে ফেললাম এবং তাকে বললাম, আমরা ঠিক আছি। আমরা যেটা দেখেছি, সেটা তাকে কখনই বলতে পারব না।
আমাদের পরিবারটি বাংলাদেশ থেকে এসেছে। সেখানে আমার বাবা একজন ক্যানভাস বিক্রির কাজ করতেন। আমাদের পরিবারটি নিম্ন মধ্যবিত্ত হিসেবে বিবেচিত হতো। ১৯৮৫ সালে কম্পিউটার সাইন্সে ডিগ্রি অর্জনের পর বাবা অধ্যাপক হিসেবে সৌদি আরবে যান এবং বাংলাদেশের তুলনায় ভালো জীবনযাপনের জন্য আমাদের তিনজনের পরিবারটিকেও স্থানান্তর করেন। ১৯৮৬ সালে ফাহিমের জন্ম। ও ছিল একটা আস্ত ইঁচড়েপাকা, কৌতূহলী, কর্মঠ এবং হাসিখুশি একটা বাচ্চা। খুব ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি ওর ভালোবাসা তৈরি হয়। যখনই সে কোনও খেলনা পেত, সে ওটা কীভাবে তৈরি করা হয়েছে তা বোঝার জন্য সব কলকব্জা আলাদা করে ফেলত। আমি আরেকটু বড় হতেই বাবা আমার পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ১৯৯১ সালে, আমার বয়স যখন ১২ ফাহিমের ৪ আর আমাদের বোনটা একেবারে শিশু, আমরা আমেরিকায় চলে এলাম।
আমরা লুজিয়ানায় থাকতে শুরু করলাম, ওখানেই বাবা কম্পিউটার সাইন্সে পিএইচডি করছিলেন। তখন মা একটা স্থানীয় কয়েন লন্ড্রিতে কাজ নিয়েছিলেন। আমাদের পাঁচ সদস্যের পরিবারটি তখন বাবার সীমিত বৃত্তির টাকা এবং অন্যদের কাপড় ভাঁজ করে পাওয়া মায়ের কিঞ্চিত বেতন এবং আত্মীয়স্বজনের দেওয়া সামান্য ঋণের টাকায় চলত। সে বছর, প্রথম গ্রীষ্মের ছুটিতে আমি ঘণ্টায় এক ডলার পারিশ্রামিকে বেবিসিটিং করি। অনেকদিন পর্যন্ত আমার মাত্র পাঁচটা টি-শার্ট এবং দু জোড়া প্যান্ট ছিল।
লুজিয়ানার বছরগুলোতে বাবা যে চাপ সহ্য করেছিলেন, সেটা আমাদের দুই বেডরুমের ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটা কোণে স্পষ্ট হয়ে ফুটেছিল। ‘এত দেরী করে কেউ আমেরিকা আসে না,’নব বিবাহিত দম্পতির জায়গায় পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে চলে আসার জন্য বাবা বিলাপ করতেন। তাঁর অধিকাংশ সহকর্মীরা নতুন দম্পতি থাকতেই চলে এসেছিলেন। ‘আমেরিকায় তুমি বিনামূল্যে কিছুই পাবে না। আমাদের এখানে প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক অনেক বছর লেগে যাবে।’ তিনি খাবার টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে বলতে থাকতেন। বাবা চোখ বন্ধ করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কপালের মাঝখানটায় টিপতে থাকতেন, বাকি আঙুলগুলো তাঁবুর মতো কপালের পাশে ঘিরে থাকত। বাবাকে এভাবে অবিরাম কষ্টের মধ্যে দেখা আমার এবং ফাহিমের জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। তাঁর বোঝা এবং যন্ত্রণা কমানোর ইচ্ছে আমাদের দুজনকেই সফলতার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে চলে।
যখন ফাহিমের বয়স মাত্র দশ বছর, সে স্থানীয় পাইকারি দোকান থেকে চকলেট কিনে ছুটির সময়টাতে সহপাঠীদের কাছে সেটা নির্দিষ্ট দাম ধরে বিক্রি করতে শুরু করে। তার এ কর্মকাণ্ডের কথা জানাজানি হয়ে গেলে স্কুলের প্রিন্সিপাল সেটা বন্ধ করে দেন। কিছুদিন পরে, ফাহিম বাবার কাছে জন্মদিনের অগ্রিম উপহার হিসেবে গয়না তৈরির সরঞ্জাম চাইল। এরপর সে নিজেই পুঁতির ব্রেসলেট এবং নেকলেস তৈরি করে সেগুলো কাছাকাছি খেলার মাঠে বিক্রি করত। এটা ছিল তার দ্বিতীয়তম ব্যবসা।
ফাহিমের আসক্তির জায়গাটা ছিল প্রযুক্তি এবং ওর ছিল অফুরন্ত সৃষ্টিশীলতা আর কৌতুহল প্রতিভা। ও যখন ইন্টারনেট পেল, ওর ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা যেন অবশেষে নিজেকে প্রকাশের একটা পথ খুঁজে পেল। বারো বছর বয়সে ফাহিম প্রথম ওয়েবসাইট তৈরি করল ‘দি সালেহ ফ্যামিলি’ নামে। আমি যদি আমার ছবির পাশে লেখা বর্ণনাটা হুবুহু মনে করতে পারতাম! কিন্তু বর্ণনাটা প্রায় এরকম, ‘এটা আমার বড় বোন। সে চমৎকার একটা মেয়ে কিন্তু আমার কাছ থেকে সে যখন রিমোট চুরি করে, ব্যাপারটা আমি একটুও পছন্দ করি না।’
ফাহিম দ্রুত আবিষ্কার করে ফেলল যে, সে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট তৈরি করে টাকা আয় করতে পারে। সে ১৯৯৯ সালে তার প্রথম ওয়েবসাইটে আয় করতে শুরু করে, যখন তার বয়স মাত্র ১৩। ততদিনে বাবা-মা লুইসিয়ানা থেকে নিউইয়র্কের রচেস্টার চলে এসেছেন। আমার কলেজ ছিল দু ঘণ্টারও কম দূরত্বের। সাইট’র নাম ছিল মঙ্কিডু: রসিকতা, মজা, নকল মলমূত্র, আরও অনেককিছু টিনেজারদের জন্য। যখন প্রথমবার গুগল থেকে ফাহিমের নামে পাঁচশ’ ডলারের চেক এলো মেইলে, বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। এতটুকু একটা ছেলে কিভাবে পাঁচশ’ ডলার আয় করতে পারে? এটা অনেক টাকা, তিনি হয়ত পরে আমাকে তার ভাবনাগুলো বলবেন।
বাবার সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্কটা ছিল অন্যরকম। তাদের দুজনের দু রকম স্বভাব। বাবা খুব বেশী দুশ্চিন্তা করতেন, যেখানে ফাহিমের দুশ্চিন্তা বলতে কিছু ছিলই না। একমাত্র ফাহিমই বাবাকে শান্ত করতে পারত। সে বাবাকে তার ওয়েবসাইট দেখিয়ে সেটা তৈরির প্রোগ্রামিংগুলো বুঝিয়ে দিল। কারণ, বাবা নিজেও একজন প্রোগ্রামার। আমাদের বাসার বইয়ের তাকগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের বই দিয়ে ঠাসা। ফাহিম নিজেকে শেখাতে বইগুলো কাজে লাগিয়েছে।
‘বাবা, টিনেজাররা সাইটটাতে ভিজিট করছে,’ ফাহিম বলল, ‘আর আমি গুগল থেকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের ভিজিট মনেটাইজ করছি।’ যদিও বাবা প্রোগ্রামিং ভাষা সম্পর্কে জানতেন, কিন্তু তিনি ইন্টারনেট সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। কিন্তু ফাহিম তাকে বোঝাতে সক্ষম হলো, দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। এরপর সে নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি চাইল কারণ সে বুঝতে পেরেছিল, তাকে নিয়মিত পে চেক রিসিভ করতে হবে। বাবা একটা ১৩ বছরের ছেলেকে নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন, কিন্তু যথারীতি ফাহিম তাকে বোঝাতে সক্ষম হলো, সবকিছু ঠিক আছে, থাকবে।
যখন থেকে সে ইন্টারনেট পেল, তখন থেকে তার সঙ্গে আমার শেষবার দেখা হওয়া পর্যন্ত, আমার ভাইটা কাজের মধ্যে এতটাই ডুবে থাকত যে, তার যে দুপুর এবং রাতের খাবার একটাও খাওয়া হয় নি এটা অনুধাবন করার আগেই সকাল হয়ে যেত। ফাহিমের এ অভ্যাসে বাবা উত্তেজিত হয়ে থাকতেন। যখন ফাহিম ছোট ছিল, বাসায় থাকত, অথবা পরে যখনই সে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকত, বাবা সবসময় ফাহিমের কাজের সময় ঠিকঠাক খেয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করতেন। বাবা হয়ত বা ফাহিমের জন্য আমার এবং বোনের উদ্ভাবিত ‘সারপ্রাইজ স্যান্ডউইচ’ নিয়ে দিতেন যা কিনা ফ্রিজে এলোমেলো যাই থাকুক তা দিয়েই জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হতো। বাবা খাবারটা দিতেই, ফাহিম সুন্দর বড় বড় চোখ নিয়ে তার সঙ্গে নিজের সর্বশেষ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিত। লম্বা পাপড়ি ঘেরা চোখে, আমার সবসময়ই ওর পাপড়িগুলোকে ভীষণ হিংসে হতো, সজীব এবং উজ্জ্বল। যখনই ফাহিম বাসায় থাকত না, বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতেন, তার ছেলেটার হয়ত ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছে না।
‘আমার পরিবার আজ কি খাবে এই দুশ্চিন্তা না নিয়ে আমাকে করতে হবে না আমি কিভাবে বেঁচে থাকব?’ দাফনের পরদিন বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
কয়েক বছর আগে বাবাকে যখন তার কম্পিউটার প্রোগ্রামারের চাকরি থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছিল, ফাহিম বাবা-মাকে মাসভিত্তিক চেক পাঠিয়েছিল, তাদের লক্ষ্য রাখা নিশ্চিত করতে। এমনকি এর অনেক আগ থেকেই সে মাকে মাসোহারা দিতে শুরু করেছিল, মায়ের সৌখিনতা পূরণ করতে। আমাদের বসার ঘরের সাজ, পুনঃসজ্জা, রকমারি সাজগহনা, এবং পছন্দের শ্যাম্পু- এগুলোতেই ছিল তার শখ। যখনই আমরা পারিবারিকভাবে রাতের খাবারের জন্য বাইরে যেতাম, আমরা কখনোই বাবাকে বিল দিতে দিতাম না। যখন ফাহিম কলেজে পড়ত আর আমি কাজ করতাম, আমি সবসময় বিলের কাগজটা নিয়ে নিতাম।
কিন্তু ও যখন ২০০৯ এ কলেজ শেষ করে কাজের উদ্যোগ নিতে শুরু করল, ও আমাদের খাবারের জন্য বেশ বড় আয়োজন করেছিল। বাবা হয়ত আমাদের লুজিয়ানার জীবন সংগ্রামের দিনগুলোতে বাইরে খেতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো রোমন্থন করতেন, ওই বছরগুলোতে আমরা সবাই প্রতি শনিবার বাবার পুরনো নীল ভক্সওয়াগন গাড়িতে করে শুধুমাত্র ডমিনো’স রেস্টুরেন্টে যেতে পারতাম আর আমাদের সাধ্যের মধ্যে ছিল একটাই মেন্যু, ৩.৯৯ ডলারের শনিবারের মিল ডিল। আমরা সবাই মিলে লার্জ পিজ্জাটা আর এক বোতল সোডা ভাগ করে খেতাম। সেটা ছিল আমাদের সারা সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য দিন।
আমরা সেসব দিনের কথা বললেই বাবা বলে ওঠেন,’স্মৃতিচারণ।’
২০০৩ সালে সতের বছর বয়সে ইন্টারনেটে ফাহিমের পরিচয় হয় ‘কে’-এর সঙ্গে। ওহাইয়ো’র সেই ছেলেটা হতে যাচ্ছিল ফাহিমের দীর্ঘতম ব্যবসায়িক অংশীদার এবং সেরা একজন বন্ধু। ওরা দুজনে মিলে উইজটিন নামক প্রকল্পটি শুরু করে, অ্যাভাটার অথবা ডলজ্গুলো ডিজাইন করতে থাকে, তখন যেসব নামগুলো পরিচিত ছিল সেগুলো। যেমন, এওএল এআইএম এবং অন্যান্য আরও মেসেঞ্জার সার্ভিসগুলো। এভাবে আয়ের মাধ্যমে ফাহিম আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠল হাইস্কুলে থাকতেই এবং নিজেকে বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর জন্য যথেষ্ট সঞ্চয় করে ফেলল। সে বাবার বোঝা হালকা করার উদ্দেশ্যটা সম্পন্ন করতে পেরেছিল।
২০০৯ সালে ফাহিম যখন গ্র্যাজুয়েশন করে ফেলল, চাকরির বাজারে তখন সঙ্কট চলছিল আর উইজটিনও খুব একটা আয় করতে পারছিল না। সে বছর পঞ্চাশ হাজার ডলারের একটা আইটি চাকরি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বাবা-মায়ের বেসমেন্টে বসে পরবর্তী প্রকল্প নিয়ে মাসের পর মাস লেগে রইল। প্র্যাঙ্কডায়াল আমার ভাইয়ের আজন্ম একটা ভীষণ শখের জায়গা। মজা করা এবং বিস্মিত করে দেওয়া ছিল ফাহিমের ব্যক্তিত্বের এমন একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ যে, ও ঘরে থাকুক বা না থাকুক আমরা সবসময় জানতাম, কিছু না কিছু একটা আছে ঘরের কোনও না কোনও কোণে।
২০১৮ সালে মাদার’স ডে’র দিন, নাইজেরিয়ায় কাজ করার সময় হঠাৎ করে ৫০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে মাকে সারপ্রাইজ দিতে নিউ ইয়র্ক চলে এলো ফুল হাতে। আরেকবার, মা সৌন্দর্যচর্চার জন্য মুখে হলুদ মেখে বসেছিল। ফাহিম, সেই অবস্থায় মায়ের ছবি তুলে নিয়ে ইন্সটাগ্রামে মাকে নিয়ে স্টোরি পোস্ট করল। কয়েক সেকেন্ড পর, মা লক্ষ্য করে তার ভিডিও করা হচ্ছে, নালিশ জানিয়ে ছুটে পালায়। এদিকে ফাহিম তার চিরাচরিত কুখ্যাত প্যাঁকপ্যাঁক শব্দ করতে থাকে। আরেকটা অনুষ্ঠানে, ফাহিম ওর বাসায় রাতের খাবারের আয়োজন করে এবং টয়লেট ব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে ফ্লাশ না করে সেগুলোকে ভাসিয়ে রেখে বেরিয়ে আসে, কারণ বাইরে আগে থেকেই কাজিন (ক) অপেক্ষা করছিল টয়লেট যাওয়ার জন্য। শেষবার ফাহিমের সঙ্গে আমার দেখা হয় এক বছর আগে। সে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে তার সদ্যজাত ভাগ্নিকে দেখতে উড়ে চলে এসেছিল।
ফাহিমের মগজটি ছিল উদ্ভাবনীর তলাবিহীন জাদুটুপির মতো বড় এবং ছোট, বদমায়েশী এবং গুরুত্বপূর্ণ, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রকল্পে পরিপূর্ণ। আপনি কখনোই জানতে পারবে না এরপরে সে কোনটা টেনে বের করতে যাচ্ছে। কিন্তু সে সবগুলো আইডিয়া নিয়েই খুব দ্রুত কাজে লেগে যায়। সে কাউকেই বসিয়ে রাখতে রাজী নয়। সে তার মাথার ভেতরের প্রকল্পটাকে পুরো দুনিয়ার সামনে উপস্থাপন করে উপভোগ করতে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ছিল।
তেত্রিশ বছরে পা দিয়ে, তার ব্যবসায়িক ধারণা আরও পরিপক্কতা অর্জন করেছিল। রসিকতা এবং তামাশ’র প্রতি তার ভালোবাসা প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রাকে পরিবর্তন করতে যাচ্ছিল, হতদরিদ্রদের কাজে নিয়োগের মাধ্যমে। খুব খারাপ অবস্থান থেকে উঠে আসার কারণে ফাহিমের সেরকম ধনী উদ্যোক্তা হওয়ার কোনও শখ ছিল না যারা কিনা শুধুমাত্র ধনীদের সাথেই ওঠাবসা করে। তার মনটা অভাবী মানুষদের জন্য কাঁদত। ‘চালকেরা আমার ওপর নির্ভর করে আছে,’ নাইজেরিয়ার তার প্রতিষ্ঠিত মোটরবাইক অ্যাপ, গোকাডা (Gokada) নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ও বলেছিল। যেভাবে বাবার বোঝা হালকা করতে ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল, পরবর্তীতে অগণিতদের জীবন সংগ্রাম সহজ করতে ও ঠিক তেমনিভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিল।
গেল কয়েক বছরে ও কেবল পেশাগত নয়, ব্যক্তিগত পরিপক্কতাও অর্জন করেছিল। সে তার নতুন অ্যাপার্টমেন্ট সাজানো নিয়ে খুবই উত্তেজিত হয়ে ছিল। সে হয়ত দীর্ঘক্ষণ ধরে বালিশগুলো নিয়েই আলোচনা করে যেত। সে রান্না করা শিখছিল, তার রোজকার দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছিল, এবং তার তিন বছর বয়সী পমস্কি কুকুর লায়লার যত্ন নিচ্ছিল। ফাহিম জীবনের কাঠামো এবং স্থিরতা তৈরি করছিল, যার একটাও তার কাছে সহজে আসে নি। ভবিষ্যতের জন্যেও ও অনেক পরিকল্পনা তৈরি করছিল।
কিন্তু, ১৯ জুলাই, ২০২০ রোববার, আমাকে আর আমার পরিবারকে, আমার মিষ্টি ভাইটাকে হাডসন ভ্যালিতে কবর দিতে হলো। আমার সুদর্শন ছেলেটার শেষকৃত্যের আয়োজন আমাকেই করতে হয়েছে। তিনদিন আগে, ফিউনারেল হোম থেকে ফোনে জানানো হয়েছিল যে,কবর দেওয়ার আগে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সেলাই করা এবং মাথার সঙ্গে ধড় জুড়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। কথাটা শুনে আমি চোখ বন্ধ করে ফেরাউনের মতো বুকের ওপর হাতদুটো ক্রস করে রাখলাম। ফোনটাকে শরীরের বিরুদ্ধে চেপে ধরে রাখলাম।
হাত মুঠো করে সমস্ত শক্তি দিয়ে হৃদপিন্ডটা ঠেসে ধরে আমি কষ্টটা সহ্য করে নিতে চাইলাম। তারপর আমি লোকটাকে কাতর অনুরোধ করলাম যেন কফিনে আমার আদরের ভাইটার শরীরের অংশগুলো যথাযথ জায়গায় থাকাটা সে নিশ্চিত করে। শেষকৃত্যের আগের দিন লোকটা আমাকে ফোন করে জানাল, ‘কাজটা সহজ ছিল না, কিন্তু আমরা তাকে ঠিকঠাক জুড়ে দিতে পেরেছি।’
শেষকৃত্যের সকাল, আমি অস্থিরতা নিয়ে নিথর হয়ে বোনের বিছানায় পড়ে ছিলাম, তখন ভোর তিনটা, বাবা-মা ফাহিমের ঘরে একসঙ্গে বিলাপ করছে, কাঁদছে, ফাহিমের বিছানার সেই চৌখুপি বিছানার চাদর আর দেওয়ালে আমাদের ছোটবেলার ছবি, তাদের কথাগুলো দেওয়াল ভেদ করে জড়িয়ে অস্পষ্ট হয়ে গেছে।
দিনটা ভীষণ গরম হয়ে উঠল। মাটিতে একটা অন্যরকম দৃশ্য সবুজ ঘাসের উপরে আমাদের সামনে স্পষ্ট হবে , চারপাশে প্রতিমার মতো ঘিরে দাঁড়ানো গাছের পাতাগুলো বাতাসে দুলছে। আমার পরিবার এবং আমি, কফিনে রাখা আমাদের মিষ্টি ছেলেটার মুখটা তাকিয়ে দেখছিলাম। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, সে খুব শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। ওর শরীরটা সাদা চাদরে ঢাকা। ধড়ের ওপরে বরফ প্যাকেট দেওয়া, সুন্দর লম্বা চোখের পাপড়িগুলো ত্বকের বিপরীতে চাকচিক্যময়। ওর চুলগুলো নিচু করে রাখা, বরাবরের মতো স্পাইক করা ছিল না, চুলের সোনালী কিনার প্রখর সূর্যের নীচে চকচক করছিল। বাবা কফিনের কাছে এগিয়ে গিয়ে আদরমাখা কণ্ঠে বলতে লাগলেন, ‘ফাহিম সালেহ, তোমাকে আমি চুলে রঙ করতে বারণ করেছি না? বলেছি না তোমাকে?’ তিনি বিলাপ করতে শুরু করলেন। আমাদের মা বারবার বলতে লাগলেন, ‘ঠিক আছে বাবু, তুমি এখন ঘুমাও, তোমার বিশ্রাম দরকার। তুমি এখন ঘুমাও।’
কবরস্থানের লোকেরা আমার ভাইয়ের কফিন নিচে মাটিতে রাখতেই, বাবা কবরের মাথার দিকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠলেন, ‘ফাহিম, যাস না বাবা। ফাহিম, ফাহিম, ফাহিম…’
জুলাই ১৩, ২০২০, ঠিক এক মাস আগে আমার ভাই তিন মাইল দৌড় শেষে নিজের ঘরে ফিরে এসে খুন হয়। কখনও কখনও এটা বাস্তব মনে হয় না যে, ফাহিম চলে গেছে। আবার কখনও কখনও এটা নিষ্ঠুর, জঘন্য এবং অসহনীয় বাস্তবতার মতো স্পষ্ট অনুভূতি দেয়, যেখানে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না এবং বুক ছেঁড়া যন্ত্রণা ছাড়া কিছুই অনুভব করি না। ফাহিমের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমি জেনেছি, ফাহিম ছিল আমাদেরকে দেওয়া বিশেষ উপহার। দেওয়া হয়েছিল এবং তারপর তাকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন আমাদের বাবা ফাহিমের কুকুর লায়লার পাশে বসে থেকে দিন পার করেন। তার সঙ্গে কথা বলেন, একমাত্র ফাহিমের সঙ্গে বলার আদরমাখা কণ্ঠে, সাফল্যের ভিডিও দেখেন অথবা সংবাদ পড়েন তার মৃত ছেলের। মায়ের কেঁদে কেঁদেই দিন কাটে। রাতে মা ঘুমাতে পারেন না।
থ্যাঙ্কস গিভিং, আমাদের পরিবারের সবার প্রিয় ছুটির দিন, এ বছর খুবই কষ্টের একটা দিন হবে। ফাহিম প্রতিবার গার্লিক ম্যাশড পটেটো তৈরি করত, আমি করতাম স্টাফিং, ছোটবোন তার বিখ্যাত ম্যাক এণ্ড চিজ তৈরি করত। হয়ত বরাবরের মতো বাবা মায়ের ওখানে না করে এবারের থ্যাঙ্কস গিভিং আমার এখানে করব, গত সপ্তাহে এটাই ভেবেছি আমি। আমি যেখানে থাকি সে এলাকাটা প্রায় সারা বছরই উষ্ণ থাকে। হয়ত এই ভিন্নতায় আমরা আমাদের ভাঙা হৃদয়ের কষ্ট কিছুটা কম অনুভব করব, যখন বাবা মায়ের রান্নাঘরের দরজা ভেঙেচুড়ে আসার জন্য ফাহিম নেই, সময় পার করে ছুটতে ছুটতে ঘরে ঢুকে দরজা খোলা রেখে ঠান্ডা বাতাস ঢোকানোর জন্য, জ্যাকেট ব্যাগ মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রান্নাঘরে নিজের জায়গা দখলের জন্য, পরিবারের সবাইকে ঘিরে ফোনে গার্লিক ম্যাশড পটেটোর রেসিপি গুগল করার জন্য ফাহিম আর ফিরে আসবে না।❐
অনুবাদ: জাহান আরা দোলন
রূপসী বাংলা অনুবাদ ডেস্ক