সর্বোচ্চ সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে চীন
চীনের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ চূড়ায় উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে বলে অনুমান কর্তৃপক্ষের। অবশ্য বর্তমানে রোগটিকে অত গুরুতর কিছু বলে মনে করছেন না তারা। নতুন কোনো মৃত্যু নেই বলে প্রতিবেদন দেওয়াও অব্যাহত রেখেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। চীনে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং এ জন্য দায়ী উপধরন ভারতে মেলায় সতর্কতা জারি করেছে দিল্লি। তারা মাস্কে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে কোভিডের নতুন বুস্টার ডোজ নাকের ড্রপ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘শূন্য কোভিড’ নীতির গণপরীক্ষা ও লকডাউন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে চলতি মাসে এসব পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে শুরু করে চীন, এর মাধ্যমে তারা ভাইরাসের সঙ্গে বসবাসের দিকে যেতে থাকা শেষ গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে ওঠে। তাদের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অর্থনীতির গতি শ্লথ করে প্রায় অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যায়, এতে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন ও বাণিজ্যে জট লেগে যায়। তবে বিষিনিষেধ শিথিলের পর সেখানে করোনার বিস্তার ঘটতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার চীনে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত উপসর্গযুক্ত নতুন চার হাজার কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং টানা তৃতীয় দিনের মতো কোভিডে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
কোনটি কোভিডে মৃত্যু তার নির্ধারক সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার মাধ্যমে এর আওতা সংকুচিত করে দিয়েছে চীন; অনেক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ তাদের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও চীনের দেওয়া তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। সেখানকার হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে গেছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, মরদেহ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সেখানকার শ্মশানগুলো।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এখন চীনের কর্মীরা যখন ক্রমবর্ধমান হারে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তখন স্বল্প সময়ের জন্য অর্থনীতিতে আরও ভাঙন দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
চীনের জাতীয় সংক্রামক রোগ কেন্দ্রের পরিচালক ঝাং ওয়েনহং বৃহস্পতিবার সাংহাইয়ের সরকার সমর্থিত অনলাইন সংবাদপত্র ‘দ্য পেপার’কে বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ চূড়ায় উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সময় গুরুতর রোগীর হারও বাড়বে, এটি নিশ্চিতভাবেই আমাদের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলবে।’ তবে এরপর কোভিড সংক্রমণের ঢেউ এক বা দুই মাস স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। ‘সংক্রমণ অনিবার্য, এ বিষয়ে আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে’।
মাস্কে ফিরছে ভারত, সতর্কতা জারি : চীনে নতুন করে করোনার ঢেউ দেখা দেওয়ায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ভারত। চীনের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়া করোনার অতি-সংক্রামক ওমিক্রন বিএফ.৭ ধরন শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে। এ কারণে উদ্বিগ্ন ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জরুরি বৈঠক করে।
বৃহস্পতিবার রিভিউ বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী মোদিসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সবাইকে করোনা টিকা ও বুস্টার ডোজ নিতে বলা হয়েছে। তবে বৈঠকে কাউকে আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সাবধানতা অবলম্বনে গুরুত্ব বোঝাতে পার্লামেন্ট ভবনে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা বেশিরভাগই মাস্ক পরে আসেন।
নতুন বুস্টার ডোজ নাকের ড্রপ : নতুন করে কোভিড আতঙ্ক শুরু হতেই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন প্রতিষেধক অনুমোদন করেছে। শুক্রবার থেকেই ভারতের বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসালয় ও দোকানে এ প্রতিষেধক পাওয়া যাবে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। এ প্রতিষেধক ভারত বায়োটেকের বানানো ‘ইনকোভ্যাক’।