হিজাব-হুলিয়ার মধ্যেই বোর্ড সেরা হলেন কর্নাটকের তাবাসসুম শাইক
হিজাব পরা বা না পরা নয়, এর চেয়ে অনেক বড় বিবেচনার বিষয় হল শিক্ষা। দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় রাজ্যের বোর্ড পরীক্ষায় মানবিকে প্রথম হয়ে এমনটাই বললেন মেধাবী ছাত্রী তাবাসসুম শাইক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিয়ে গত বছর কর্নাটকের উদুপিতে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়ে। এর পরই হিজাব পরে ক্লাসে আসা যাবে না বলে নির্দেশনা জারি করে বিজেপি শাসিত দক্ষিণের এই রাজ্য। এরপর বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভও হয়। এই অবস্থায় বহু ছাত্রী প্রথাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিয়ে প্রাক বিশ্ববিদ্য়ালয় কলেজ পিইউসি) ভর্তি হন। মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরি এই প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। নিষেধাজ্ঞার ফলে তাবাসসুম শাইক নিজেও অনেক দিন তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লুরুর এনএমকেআরভি পিইউ কলেজ ফর উইমেন কলেজে যাননি।
তাবাসসুম বলেন, তার ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বাবা আব্দুল খাউম শাইক এবং গৃহিনী মা পারভীন মোদি মেয়ের সঙ্গে বসে মতামত জানতে চান। তিনি বাবা-মাকে জানিয়ে দেন পড়ালেখাই মূখ্য। সে ঘটনার উল্লেখ করে তাবাসসুম বলেন, ‘ধর্ম এবং শিক্ষা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুটো থেকে যখন একটিকে বেছে নিতে বলা হয়, তখন আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে, বিশেষ করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে। তখন কিছুদিন আমি কলেজেও যাইনি।’
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তাবাসসুম আরো বলছিলেন, এই হিজাব বিতর্কে অনেক ছাত্রী কলেজ থেকে ঝরে পড়েছে। কেউ ডিপ্লোমা কোর্সে ঢুকে পড়েছে, কেউবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা আমাকে বলেছিলেন আমার শিক্ষা চালিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলছিলেন, আমি যদি কষ্ট করে লেখাপড়া করি তাহলে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবো। আমার বন্ধুরা খুব সমর্থন করেছিল কারণ তারা জানত যে প্রথমবারের মতো কলেজে আমাকে হিজাব ছাড়তে হচ্ছে এবং এ নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলাম।’
বেঙ্গালুরুর এনএমকেআরভি পিইউ কলেজ ফর উইমেন এ যাওয়ার আসার পথে তিনি হিজাব পড়তেন বলেও জানিয়েছেন। একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২১ তারিখ যখন তার বোর্ড সেরা হওয়ার ফলাফল আসে, তাবাসসুম হিজাব পড়েই প্রিন্সিপালের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং তাতে কেউ বাধা দেয়নি।
গত ২১ এপ্রিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশ করে কর্নাটক স্কুল এক্সামিনেশন অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট বোর্ড বা কেএসইএবি। সেখানে মানবিক বিভাগে প্রথম হন তাবাসসুম। ৬০০-র মধ্যে ৫৯৩ নম্বর পান তিনি। এর মধ্যে ১০০-তে ১০০ নম্বর পেয়েছেন হিন্দি, সমাজবিদ্যা ও মনোবিদ্যায়।
‘এক মাত্র কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই পরীক্ষায় ভালো ফল করা সম্ভব। পড়াশোনার সময় হিজাবের মতো কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হতেই পারে না।’ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তাবাসসুম।
এই হিজাব বির্তক নিয়ে গত বছর কর্নাটক হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। আদালত সরকারের সিদ্ধান্তই বহাল রাখে। পরে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। শীর্ষ আদালতের তরফে এখনো চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়নি।
তবে এবার তিনি আরভি ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজি নিয়ে স্নাতক শ্রেণিতে পড়বেন। এক্ষেত্রে হিজাব পরে ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ আর তার থাকছে না। তবে প্রতিকূল এই পরিবেশে যে কোন মূল্যে শিক্ষাকে আঁকড়ে থাকতে চান বলে জানান। তাবাসসুমের বড় ভাই এমটেক করছেন।
সূত্র : দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস