২০২২ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ১০ কোচ
বেশ কয়েকজন হাইপ্রোফাইল কোচ দেখা যাবে কাতার বিশ্বকাপে। সবার পারিশ্রমিক কিন্তু সমান নয়। ৩২ দলের কোচদের মধ্যে কে কত বেতন পান, তা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে ‘ফাইন্যান্স ফুটবল’। তাদের গবেষণায় সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া কোচ জার্মানির হ্যানসি ফ্লিক। তারপর রয়েছেন ইংল্যান্ডের গ্যারেথ সাউথগেট ও ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশম। তালিকায় শীর্ষ ১০-এ জায়গা পেয়েছেন ব্রাজিলের লিওনার্দো বাচ্চি তিতে, পর্তুগালের ফার্নান্দো সান্তোস এবং আর্জেন্টিনার লিওনেল স্কালোনিও। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, লুইস এনরিকের মতো নামকরা কোচ রয়েছেন ১৬ নম্বরে। গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচও (৫৫ লাখ ইউরো) খুব একটা বেতন পান না। তালিকায় ২৪ নম্বরে ঠাঁই মিলেছে তার। সবচেয়ে কম বেতন ১৩ লাখ ইউরো বাৎসরিক বেতন তিউনিসিয়ার কোচ জলিল কাদরির।
শীর্ষ ১০-এর বাইরে তবে ২০-এর মধ্যে থাকা কোচরা হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার পাওলো বেনতো (১.৩০ মিলিয়ন), অস্ট্রেলিয়ার গ্রাহাম আরনল্ড (১.৩০ মিলিয়ন), যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেগ বারহল্টার (১.২৫ মিলিয়ন), বেলজিয়ামের রবার্তো মার্টিনেজ (১.২০ মিলিয়ন), ডেনমার্কের ক্যাসপার হিয়ুলমান (১.১৫ মিলিয়ন), স্পেনের লুইস এনরিকে (১.১০ মিলিয়ন), সৌদি আরবের হার্ভে রেনার্ড (১.১০ মিলিয়ন), জাপানের হাজিমি মরিয়াসু (১.০৫ মিলিয়ন), মরক্কোর ভাহিদ হালিলহোদিচ (৯ লাখ ২০ হাজার), উরুগুয়ের দিয়েগো আলোনসো (৮৬ লাখ)।
হ্যানসি-ডিটার ফ্লিক (জার্মানি)
২০০৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত জার্মানির কোচ ছিলেন জোয়াকিম লো। তার অধীনে ব্রাজিলের মাটিতে ২০১৪ বিশ্বকাপ জেতে জার্মানরা। তবে ২০২০ ইউরোতে ব্যর্থতার পর গত বছরের ৯ই মার্চ দায়িত্ব ছাড়েন লো। তার উত্তরসূরি হিসেবে বায়ার্ন মিউনিখকে চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতানো হ্যানসি ফ্লিককে বেছে নেয় জার্মানি। জার্মান এই কোচের বাৎসরিক বেতন ৬.৫ মিলিয়ন ইউরো।
গ্যারেথ সাউথগেট (ইংল্যান্ড)
২০১৬তে স্যাম অ্যালারডাইস কেলেংকারির পর যুব দলের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের কাঁধে জাতীয় দলের দায়িত্ব তুলে দেয় ইংল্যান্ড। রাশিয়ায় গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে নিয়ে যান সাউথগেট। এছাড়া ২০২০ ইউরোতে তার দল হয়েছে রানার্সআপ। স্বদেশি সাউথগেটের ওপর তাই আস্থা রেখেছে ইংল্যান্ড। তার বাৎসরিক বেতন ৫.৮ মিলিয়ন ইউরো।
দিদিয়ের দেশম (ফ্রান্স)
ক্রীড়াজগতের অন্যতম সৌভাগ্যবান ব্যক্তিত্ব। খেলোয়াড় ও কোচ দুই ভূমিকায় জিতেছেন বিশ্বকাপ। যদিও জাতীয় দলের কোচ হতে আগ্রহী ছিলেন আরেক কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান। কিন্তু ২০১৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন কোচ দেশমকেই কাতার কাফেলার প্রধান করে পাঠাচ্ছে ফ্রান্স। বছরে ৩.৮ মিলিয়ন ইউরো বেতন পান তিনি।
লিওনার্দো বাচ্চি তিতে (ব্রাজিল)
বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলের কোচ হওয়া একদিকে যেমন সম্মানের, অন্যদিকে চাপের। ২০১৬ থেকে সেই চাপ সামলাচ্ছেন তিতে। ৬ বছরে দলকে এনে দিয়েছেন একটি কোপা আমেরিকা শিরোপা। তবে আসল চাওয়া বিশ্বকাপ স্বপ্ন এখনও অপূর্ণ। গত আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়লেও ব্রাজিল বিশ্বাস রেখেছে তিতের ওপর। বছরে ৩.৬ মিলিয়ন ইউরো বেতন দিচ্ছে এই কোচকে।
লুইস ভ্যান গাল (নেদারল্যান্ডস)
এতক্ষণ যাদের কথা বলা হলো, এদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ লুইস ভ্যান গাল। নেদারল্যান্ডসের এই কোচ ইউরোপের ক্লাব পর্যায়ে কোচিং করিয়েছেন আয়াক্স, বার্সেলোনা, বায়র্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো দলকে। তার অধীনে এর আগেও দু’বার খেলেছে নেদারল্যান্ডস। সর্বোচ্চ অর্জন ২০১৪ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান। ২০১৭তে পারিবারিক কারণে নেদারল্যান্ডস দলের দায়িত্ব ছাড়েন ভ্যান গাল। দুই বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণাও দেন তিনি। তবে গত বছরের ৪ঠা আগস্ট অবসর ভেঙে ফের নেদারল্যান্ডসের কোচের ভূমিকায় ফিরেছেন ভ্যান গাল। তার বাৎসরিক বেতন ২.৯ মিলিয়ন ইউরো।
জেরার্ডো টাটা মার্টিনো (মেক্সিকো)
নামটা কি পরিচিত লাগছে? ২০১৩-১৪ পর্যন্ত এই আর্জেন্টাইন ছিলেন বার্সেলোনার দায়িত্বে। ২০০৭-১১ পর্যন্ত প্যারাগুয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪-১৬ পর্যন্ত ছিলেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচও। গত ২ বছর ধরে তিনি মেক্সিকোর ডাগআউট সামলাচ্ছেন। তিনবারের কোপা রানার্সআপ (২০১১তে প্যারাগুয়ে ও ২০১৫, ২০১৬তে আর্জেন্টিনার হয়ে) মার্টিনোকে বছরে ২.৯ মিলিয়ন পাউন্ড বেতন দিচ্ছে মেক্সিকো।
লিওনেল স্কালোনি (আর্জেন্টিনা)
অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এক আর্জেন্টাইন কোচ। ২০১৮তে কেয়ারটেকার কোচ হিসেবে ভালো করার পর স্কালোনিকে হেড কোচ বানায় আর্জেন্টাইন এফএ। সেলেসাওদের দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এনে দেন কোপা আমেরিকা ট্রফি। তার অধীনে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৩৩ ম্যাচ অপরাজিত আর্জেন্টিনা। পথে জিতেছে লা ফিনালিসিমা ট্রফিও। বিশ্বকাপের অন্যতম হট কোচ স্কালোনির বাৎসরিক বেতন ২.৬ মিলিয়ন ইউরো।
ফেলিক্স সানচেজ বাস (কাতার)
দীর্ঘদিন (১৯৯৬-২০০৬) বার্সেলোনার যুব দলের কোচ ছিলেন। ২০১৩তে কাতার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হন। এরপর দায়িত্ব নেন অনূর্ধ্ব-২৩ দলের। সেখান থেকে জাতীয় দল। বিশ্বকাপ আয়োজকদের বর্তমান দলটা ফেলিক্সেরই গড়া। বছরে ২.৪ মিলিয়ন ইউরো করে বেতন পাচ্ছেন এই স্প্যানিয়ার্ড কোচ। সর্বোচ্চ বেতন পাওয়াদের তালিকায় ৮ নম্বরে তিনি।
ফার্নান্দো সান্তোস (পর্তুগাল)
স্বদেশি এই কোচ দিয়েই ২০১৬ ইউরোতে বাজিমাত করে পর্তুগাল। প্রথমবার কোনো মেজর ট্রফি জেতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দল। ২০১৮ বিশ্বকাপে যদিও শেষ ষোলোতেই বিদায় নিতে হয়েছে পর্তুগালকে, সুবিধা করতে পারেনি ২০২০ ইউরোতেও। তবুও কাতারের জন্য সান্তোসের ওপরই ভরসা রেখেছে পর্তুগাল। বছরে ২.২৫ মিলিয়ন ইউরো বেতন দিচ্ছে এই কোচকে।
মুরাত ইয়াকিন (সুইজারল্যান্ড)
সুইজারল্যান্ডের সাবেক খেলোয়াড় মুরাত ইয়াকিন ২০২১ থেকে হেড কোচের ভূমিকায় আছেন। এফসি বাসেল, স্পার্তাক মস্কোর মতো ক্লাবকে কোচিং করিয়েছেন। তার অধীনে ৯ই আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচে ৫ জয়, ৪ হার ও ৪ ড্র দেখেছে সুইজারল্যান্ড। মুরাত ইয়াকিনের বেতন ১.৬০ মিলিয়ন ইউরো।