Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
April 18, 2024
Homeপ্রধান সংবাদ২৪ ঘণ্টার বিভীষিকায় পুড়ে ছাই ৪৯ প্রাণ

২৪ ঘণ্টার বিভীষিকায় পুড়ে ছাই ৪৯ প্রাণ

২৪ ঘণ্টার বিভীষিকায় পুড়ে ছাই ৪৯ প্রাণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে একটি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনের পর বিস্ফোরণে শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, উৎসুক জনতাসহ ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। দগ্ধ ও আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক মানুষ। দগ্ধ ও আহত ৯০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন চারজন। এছাড়া গুরুতর আহত ও দগ্ধ কয়েকজনকে চট্টগ্রাম ও ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ও দগ্ধ রোগীদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় এখনো বেশ কয়েকজন নিখোঁজও রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার চেষ্টায়ও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় উদ্ধারকাজও শেষ হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও চিকিৎসকদের আশঙ্কা সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা। জাতীয় সংসদেও হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানানো হয়।

এদিকে প্রাণহানির পাশাপাশি এ দুর্ঘটনায় হয়েছে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতিও। অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো সঠিকভাবে নিরূপণ করা না গেলেও তা কয়েক হাজার কোটি টাকার সমান বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়টিও কী পরিমাণ তা এখনই বলতে পারছে না কোনো সংস্থা। তবে সবারই ভাষ্য, এ দুই ধরনের ক্ষতি দৃশ্যমান হবে আরও পরে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, কনটেইনার ডিপোটিতে ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড’ নামে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ; উচ্চতাপে এটি বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এতে উদ্ধারকর্মীরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আশপাশের জনবসতিতে বাসিন্দারা নাখ-মুখ ঢেকে চলাচল করছেন।

স্থানীয়রা জানায়, রাত ১১টার দিকে প্রথমে বিকট শব্দের একটি বিস্ফোরণের শব্দ তারা পেয়েছেন। সে সময় আশপাশের অনেক বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। এরপর আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখেন তারা। সেই ধোঁয়া তাদের পীড়া দিচ্ছে। চার কিলোমিটার দূরের ভবনের কাচ ভেঙে পড়ার তথ্য জানান তারা। আর কম্পন অনুভূত হয় ১৫ কিলোমিটার দূরেও।

গত শনিবার রাত ৯টার দিকে ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে একটি কনটেইনারে আগুন লাগে। খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এর মধ্যে রাত ১১টার দিকে হঠাৎ রাসায়নিকভর্তি একটি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এরপর সারা রাতই আগুনের সঙ্গে লড়াই চলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, চট্টগ্রাম শহর থেকে একে একে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট। এর মধ্যেই থেমে থেমে হয় বিস্ফোরণ। আগুনের কাছে যেতেই বেগ পেতে হয় ফায়ার ফাইটারদের। পানি সংকট ও কনটেইনারের কোন ধরনের দ্রব্য আছে তা না জানায় অথৈ পাথারে পড়েন তারা। ভোররাতের দিকে একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে যন্ত্রের সাহায্যে ছিটানো হয় পানি। সকালে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট যোগ দেয়। সব মিলিয়ে ২৯টি ইউনিট ২৪ ঘণ্টার চেষ্টায়ও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। গতকাল রবিবার রাত ৯টার সময়ও কয়েকটি কনটেইনারে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক নিউটন দাশ জানান, ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে তিনটি ইউনিট যায়। তারা যখন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল তখনই একটি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। তাতে তাদের কর্মীসহ পুলিশ ও শ্রমিক দগ্ধ হন। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আরও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। রাত যত বাড়তে থাকে পরিস্থিতি ততটাই খারাপ হতে থাকে। এর সঙ্গে দেখা দেয় তীব্র পানিসংকট। ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, রাতে একের পর এক বিস্ফোরণের কারণে কাছে যেতে বেগ পেতে হয় কর্মীদের। আর আশপাশে পানিরও সংকট ছিল প্রকট। আশপাশ এলাকায় কোনো জলাশয় না থাকায় টিউবওয়েল ও নালার পানি ব্যবহার করতে হয়েছে।

এদিকে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি বিশেষ টিম সীতাকুণ্ডে পৌঁছায়। ওই দলে ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাস্থলে ডিপো কর্র্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই এখানে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে, তা বলা যাচ্ছে না। পানি দিয়ে সব কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে। আগুন নেভাতে গিয়ে আমাদের নয়জন কর্মী প্রাণ দিয়েছেন।’

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২০০ স্বেচ্ছাসেবীও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন। এছাড়াও ঘটনাস্থলে গুরুতর আহতদের সেবা প্রদানে সোসাইটির পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম ইউনিট জানিয়েছে, জরুরি রক্তের প্রয়োজনে তারা হটলাইন চালু করেছে।

উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীর ২৫০ সদস্য : আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে আছে আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দল। এছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার এবং নিরাপত্তা দলও নিয়োজিত রয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিস্ফোণের কারণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিকসামগ্রী সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া রোধে দলটি কাজ করছে। এজন্য তারা রাসায়নিক পদার্থ সমুদ্রে বা লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য বালির বস্তা দিয়ে ছোট ছোট খালের মুখে বাঁধ দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশও ঘটনাস্থলে সহায়তা করছে। তাছাড়া বিস্ফোরণে আহতদের সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম শনিবার রাত থেকে কাজ করছে বলেও জানানো হয়।

হাসপাতালে ঠাঁই নেই : এদিকে রাত সাড়ে ১২টার দিক থেকে চমেক হাসপাতালে আহত ও দগ্ধদের নিয়ে আসা শুরু হয়। শহরের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা দেওয়া হয় আহত ও দগ্ধদের। এরপর সকাল পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আহতদের অধিকাংশকে আনা হয় চমেক হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। রাত থেকেই হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের রক্ত দিতে ভিড় করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। হাসপাতালে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা ভিড় করছেন। স্বজনদের খোঁজ করছেন। তাদের কান্না ও আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

শনিবার রাত দেড়টার দিকে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক নূরুল আলম জানিয়েছিলেন, সে সময় পর্যন্ত দুই শতাধিক আহত ও দগ্ধকে সেখানে নেওয়া হয়েছে। সে সময় চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রাজীব পালিত জানান, দগ্ধদের অনেকেরই শরীরের বেশিরভাগ পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের অনেকের জন্য রক্তের প্রয়োজন। রাতেই চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী সব চিকিৎসক ও নার্সের ছুটি বাতিল করে চমেকে আসার নির্দেশ দেন।

গতকাল বিকেলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান জানান, শনিবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত কয়েকশ মানুষ আসে আহত অবস্থায়। তাদের অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখনো ৭০ থেকে ৯০ জন চিকিৎসাধীন। আর চারজন আছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। বেশ কয়েকজনকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

১৪ জন ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটে : গতকাল গুরুতর দগ্ধ ১৪ জনকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনকে আনা হয়েছে সেনাবাহিনীর হেলিকপটারে ও অন্যদের অ্যাম্বুলেন্সে করে। গতকাল সকাল থেকে দিনভর উন্নতি চিকিৎসার জন্য একে একে ঢাকায় আনা হয় তাদের। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেনাবাহিনী নিয়ে আসে সাতজনকে। এর আগে আরও ছয়জনকে সেখানে ভর্তির তথ্য জানান বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।

এদিকে হতাহতদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। গতকাল দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে দগ্ধদের দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। নানক বলেন, ‘দুর্ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের নিঃস্বার্থ কর্মীরা জীবন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত মধ্যরাত (শনিবার) থেকেই হতাহতদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। আহতদের চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমরা রোগীদের খোঁজখবর নিতে এসেছি।’

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক : অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলাদা শোক বার্তায় তারা নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি দুর্ঘটনায় আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন। আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

ভয়াবহ ওই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ আরও অনেকে। এছাড়া জাতীয় সংসদও গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। গতকাল বসা বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। আহতের আশু আরোগ্য কামনা করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা : অগ্নিকাণ্ডে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা হিসেবে নগদ ১ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এক হাজার প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এছাড়া নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্যটি জানানো হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার এবং আহতদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

বিএম ডিপো কর্র্তৃপক্ষও নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, ‘গুরুতর আহত হয়ে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের ৬ লাখ, বাকি আহতদের ৪ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।’

তিন তদন্ত কমিটি : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এসব কমিটি গঠন করেছে।

ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিমকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। টার্মিনাল ম্যানেজারকে প্রধান করে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটিকেও তিন কর্মদিবসের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, ‘মানুষের প্রাণ বাঁচানো আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি। আগে উদ্ধার অভিযান শেষ করি। এরপর সব পক্ষকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’

এছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঁচ সদস্যের স্বাস্থ্যবিষয়ক মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়। এতে চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খানকে আহ্বায়ক করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ ওয়াজেদ চৌধুরীকে ফোকাল কর্মকর্তা, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া ও সীতাকুন্ডের ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ উশ্রী দাশ গীতাকে সদস্য এবং সংযুক্ত সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী এসএম সাহিদুল ইসলামকে দাপ্তরিক সমন্বয়ক করা হয়েছে।

ডিএনএ টেস্টের পর লাশ হস্তান্তর : নিহতদের প্রত্যেকের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ টেস্ট করা হবে। এরপর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের অনেকে হাসপাতালে মরদেহ শনাক্তের পর নিয়ে যেতে চাইছেন। তবে নিহতদের সবার ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ টেস্ট করা হবে। যাবতীয় নিয়ম অনুসরণ করে পরিবার ও স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। তবে কবে শুরু হবে তা জানাননি তিনি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ও চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী কদমরসুল নামক স্থানে ২৬ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত ওই আইসিডির নাম বিএম কনটেইনার ডিপো। এটির ধারণক্ষমতা প্রায় সাত হাজার। অগ্নিকাণ্ডের সময় সেখানে তিন হাজার খালি কনটেইনার, ৮০০ রপ্তানি পণ্যের এবং ৫০০ আমদানি পণ্যের কনটেইনার রক্ষিত ছিল। এতে রাসায়নিক দ্রব্যের কনটেইনার ছিল ১৫ থেকে ২০টি। অকল্পনীয় এ ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডে ডিপোতে অবস্থানরত বহু ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ডিপোর এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা প্রথমে ভেবেছিলেন আগুন তত ভয়াবহ নয়। কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। কিন্তু বিস্ফোরণের পর পুরো দৃশ্যই পাল্টে যায়। যে যেদিকে পারেন ছুটে পালান। ওই কর্মকর্তার ধারণা, কনটেইনারে বিস্ফোরকজাতীয় দ্রব্যের কারণে এ আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের খোঁজখবর নিতে গত শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে গেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, রেড ক্রিসেন্টের ম্যানেজিং বোর্ড মেম্বার ডা. শেখ শফিউল আজম প্রমুখ।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment