বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে আজ
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর। এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সহায়তায় বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য, পঙ্গু করার সেই ঘৃণ্য পরিকল্পনা সুচারুরূপে বাস্তবায়নে জঘণ্য ভূমিকা পালন করেছিল। তারা একাত্তরের বিজয়ের সূর্যোদয়ের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জাতির সহস্রাধিক শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত লাশ ফেলে রেখে গিয়েছিল।
আজ ১৪ই ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি আজ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যার নীলনকশার ছক ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’ পরিকল্পনারই অংশ। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হয় নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানের ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে। ১৪ ডিসেম্বরের সেই হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা। যা সেদিন বিশ্বের শান্তিকামী মানুষকে হতবাক করে দিয়েছিল।
একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সহিত্যিকদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।
তবে পাকিস্তানি হানাদার আর এদেশীয় দোসররা ঠিক কতজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল তার সঠিক সংখ্যা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’ এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায় শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন। এর মধ্যে ৯৯০ জন প্রখ্যাত শিক্ষক, ১৩ জন সাংবাদিক, ৫০ জন চিকিৎসক, ৫০ জন আইনজীবী ও ১৮ জন লেখক, প্রকৌশলীসহ অন্যান্য বুদ্ধিজীবী।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় রয়েছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ সহস্রাধিক।
একাত্তরের সেই বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে। মানবতাবিরোধী হত্যা মামলায় দণ্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। জামায়াতের অপর নেতা মো. কামারুজ্জামান এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।২০১৬ সালের ১১ মে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়।
তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় বিচার এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।চৌধুরী মইনুদ্দীন যুক্তরাজ্য এবং আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছে। তাদেরকে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয়ভাবে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এদিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে এবং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টা ৬ মিনিটে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। ৮টা ৪৫ মিনিটে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে এদিন বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলতনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।