Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
November 22, 2024
হেডলাইন
Homeপ্রধান সংবাদ১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দেশে ফেরার আকুতি

১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দেশে ফেরার আকুতি

১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দেশে ফেরার আকুতি

চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ফলে দেশটির হুবেই প্রদেশে আটকেপড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক এখন আর্তনাদে পরিণত হচ্ছে। এই প্রদেশে ইচাং সিটির ‘চায়না থ্রি জর্জেস ইউনিভার্সিটি’র বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে ভয়ংকর আতঙ্কে।
 
সেখানকার তিনটি হোস্টেলে ১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তারা। দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে হোস্টেলকক্ষে অবরুদ্ধ জীবন, খাবার সংকট, দিনরাত মৃত্যুভয় এবং দুর্বিষহ জীবনযাপনের কথা তুলে ধরছেন তাদের ফেসবুক ওয়ালে। দেশে মা-বাবাসহ ঘনিষ্ঠজনের কাছে ফোনে কান্নাকাটি করছেন। দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানাচ্ছেন সরকারের কাছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ওই ১৭১ জনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
 
আটকেপড়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ইন্টারনেটের সহায়তায় রবি ও সোমবার কথা হয় সমকালের। শিক্ষার্থীরা জানান, হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ২৮৬ কিলোমিটার দূরে ইচাং সিটিতে ‘চায়না থ্রি জর্জেস ইউনিভার্সিটি’। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি ১৮৫ ছাত্রছাত্রী ব্যাচেলর ও মাস্টার্স পড়ছেন; কয়েকজন পিএইডিও করছেন। তবে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আগেই শীতকালীন
ছুটিতে ১৪ জন দেশে আসেন।
 
বর্তমানে ১৭১ জন অবস্থান করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হোস্টেলে। এগুলো হলো বয়েজ ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল, গার্লস ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট হোস্টেল। এর মধ্যে অন্তত ১২ তরুণী রয়েছেন। হোস্টেলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি।
 
করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর গত ২৩ জানুয়ারি হোস্টেল থেকে তাদের বাইরে বের হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে তারা হোস্টেলকক্ষেই অবরুদ্ধ। সর্বোচ্চ বারান্দা পর্যন্ত আসতে পারেন তারা। এক হোস্টেল থেকে আরেক হোস্টেলে যাওয়ার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
 
ইচাং সিটিতে বিমানবন্দর, বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ অবস্থায় সরকারের সাহায্য ছাড়া বের হওয়ার কোনো উপায় নেই তাদের। তারা উইচেটের মাধ্যমে প্রতিদিন করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আপডেট চেক করেন। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা বড় হচ্ছে। চীনে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের একজনও এখনও আক্রান্ত হননি বলে জানান এই শিক্ষার্থীরা।
 
ফয়সাল বিন আসহাব জোয়ার্দ্দার উৎসব গত ৭ ফেব্রুয়ারি তার ফেসবুক ওয়ালে নিদারুণ কষ্টের কথা লিখেছেন, ‘হোস্টেল ক্যান্টিনে খাবারের দাম বেশি। ২ ফেব্রুয়ারি আমি চার কেজি আলু, এক ডজন ডিম ও চাল কেনার অর্ডার করি। তারা আমাকে ৬ ফেব্রুয়ারি ডেলিভারি দিয়েছে ৬টা ডিম ও ৪টা আলু। চাল দেয় নি। ৬টা ডিম আর ৪টা আলু দিয়ে আমি কত দিন বেঁচে থাকব!’
 
যোগাযোগ করা হলে ফয়সাল বিন আসহাব জোয়ার্দ্দার উৎসব সমকালকে বলেন, তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলায়। তিনি পোস্টগ্র্যাজুয়েট হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করেন। এই হোস্টেলে বাংলাদেশি রয়েছে ৬০ জন। তাদের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। অবরুদ্ধ এবং একবেলা খেয়ে না-খেয়ে দিন যাচ্ছে। কীভাবে সময় কাটছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। প্রায় প্রতিদিনই ভাইরাস আতঙ্কে বাঙালি মেডিকেলপড়ূয়া বড় ভাইদের কাছে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছেন অনেকেই। সামান্য হাঁচি বা বুকে ব্যথা হলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। ভাবছেন, হয়তো ভাইরাস অ্যাটাক। হোস্টেল কর্তৃপক্ষ কাউকে কাউকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে বলছেন, ‘খাদ্যাভাবে ও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় এমনটা হচ্ছে, করোনাভাইরাস না।’ উৎসব জানান, দুশ্চিন্তায় তাদের ঘুম হচ্ছে না। কবে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন, সেই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন।
 
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাউফুল ইসলাম রউফের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। তিনিও পোস্টগ্র্যাজুয়েট হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করেন। গত সোমবার সমকালকে তিনি বলেন, ‘এখানে বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। চারদিক শুধু আতঙ্ক। এরই মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের ফিরিয়ে না নিলে আমরা আতঙ্কেই মরে যাব। প্লিজ, আমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হোক।’
 
একই হোস্টেলে আটকেপড়া শিক্ষার্থী আবুল হাসান মোল্লার বাড়ি গোপালগঞ্জে। সোমবার তিনি সমকালকে বলেন, ‘প্রায় ১৮ দিন রুমে অবরুদ্ধ। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। আমরা যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নাও হই, এভাবে অবরুদ্ধ পরিবেশে সুস্থ থাকার সুযোগ নেই বেশিদিন। নানাবিধ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে যাব। শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমরা বাঁচতে চাই। দেশে ফিরতে চাই।’
 
আরেক শিক্ষার্থী শাওন সমকালকে জানান, তাদের খাবারের মজুদ প্রায় শেষ। সিটি লক ডাউন থাকায় অন্য সিটিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। এ কারণে এই সিটিতে খাবারের মজুদ কমে এসেছে। যে কারণে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ তাদের খাবারের জন্য দোকানের ব্যবস্থা করে দিলেও চাহিদা অনুযায়ী খাবার পাচ্ছেন না। খাবারের দাম কয়েকগুণ বেশি।
 
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমাদের খাবার ছিল না। আমরা অর্ডার করছিলাম, তা আসছে চার দিন পর। তাও খুবই সস্তা খাবার। ছয়টি বেগুনের দাম বাংলা টাকায় ৬৫০ টাকা। আমরা খুবই বিপদে আছি, আমাদের সাহায্য করার অনুরোধ রইল।’ ফেসবুকে লম্বাকৃতির বেগুনের ছবি পোস্ট করেন তিনি।
 
আরেক শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন মাসুম গত ৬ ফেব্রুয়ারি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে জেলে রাখুন। বিমান ভাড়া না থাকলে আমরা দেব।’
 
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে দ্বীন মুহাম্মদ প্রিয় তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের ১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর আকুল আবেদন, দয়া করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান। চীনের ইচাং শহরে প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যুভয়ে কাটাচ্ছি। জানি না, কত দিন এখানে সুস্থ থাকতে পারব। দিন দিন মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
 
এই মৃত্যু-মিছিলের মধ্যে কত দিন বেঁচে থাকব? প্রধানমন্ত্রী ১৭১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং আমাদের পরিবার আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনার প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস, আপনি আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশ যতবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আপনি বারবার সেই সমস্যার সমাধান করেছেন। এক রুমের মধ্যে আটকে আছি। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আমরা।’
Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment