জাতীয় পতাকা বিকৃতি
বাংলাদেশে রংপুর বিভাগের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষককের সম্প্রতি বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর সময় ভিন্ন রকম একটি পতাকা ব্যবহার করার বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দাখিল করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুজন অধ্যাপক।
বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক এবং গণিত বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজনকে আসামী করে দাখিল করা তাদের এজাহারে তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতীয় পতাকা বিকৃত, তা উপস্থাপন ও অবমাননার অভিযোগ এনেছেন।
বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষকদের তোলা ওই ছবিতে যে পতাকাটি ব্যবহার করতে দেখা যায় সেটিতে সবুজ জমিনে লাল রঙের বৃত্তের পরিবর্তে চার কোণা একটি আকৃতি বসানো হয়েছে।
ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং ব্যবহার করা পতাকার নকশায় পরিবর্তন আনার সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক জুড়ে। সামাজিকমাধ্যমে এর প্রতিবাদ এবং নিন্দার ঝড় ওঠে।
এমন পতাকা ব্যবহারের সমালোচনা করে ফেসবুকে এর আগে একটি পোস্ট দেন থানায় অভিযোগাকারীদের একজন – গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক।
তিনি তার পোস্টে লেখেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে লজ্জিত। কারণ এরা সবাই শিক্ষক।’
‘বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকাকে অবমাননা! পতাকার ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। বৃত্ত না দিয়ে চারকোণার মতো আকৃতি দেয়া হয়েছে। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
মাহমুদুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এটা একটা সেন্ট্রাল প্রোগ্রাম। এর পুরো দায়দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষের। যারা করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের যারা এর সাথে রয়েছে তারা সবাই সমভাবে অপরাধী।’
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের বেশ কয়েকটি গ্রুপও পোস্ট দিয়েছে এবং এর সমালোচনা করেছে।
আওয়ার ক্যাম্পাস নামে একটি গ্রুপ থেকে ছবিটি পোস্ট করে বলা হয়েছে, ‘বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকার নতুন মডেল উন্মোচন বেরোবি (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষকদের, আহা!আহা!”
তৌফিক-উর-রহমান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী অন্য আরেকটি গ্রুপের পোস্ট শেয়ার করে লেখেন, ‘বাহ!! জাতীয় পতাকার নতুন ডিজাইন!!’
জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে সেখানে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মাসুদুল হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরিয়াল বডিরও একজন সদস্য। তাকেও এজাহারে অপরাধীদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
মাসুদুল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, একদিকে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক, প্রোক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক হিসেবে বিজয় দিবসে বেশ কয়েক দফায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়েছে তাকে।
ফুল দিতে গিয়ে অনেকের সাথেই তাকে ছবি তুলতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে আমি আমার পেছনের দিকে খেয়াল করলাম যে কয়েক জন শিক্ষক পতাকা সদৃশ কিছু একটা নিয়ে ছবি তুলছে। তো আমি পেছন দিক থেকেই তাদের সাথে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, কেউ যখন পতাকা নিয়ে ছবি তুলবে তখন সেটার মাপজোক যে ঠিক থাকবে না, সেটি তার মাথাতেই আসে নি। তিনি পতাকাটি সামনে থেকে দেখেন নি বলেও জানান।
‘রাত্রে ছবিটা দেখে নিজের থেকেই খারাপ লেগেছে,’ তিনি বলেন।
তবে পতাকাটি কে বা কারা এনেছে সে বিষয়টি এখনও জানা সম্ভব হয় নি বলে জানান তিনি।
ছবিটিতে ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষকই ছবি তুলেছেন।
তবে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে সেটিতে যে পতাকা দেখা যাচ্ছে সেটি আসলে পতাকা নয়, বরং ব্যানারের মতো ছিল।
‘সবাই দাঁড়িয়েছে লাল-সবুজ পতাকা দেখে, এটি একটি ব্যানার হিসেবে। ছবি তোলার সময় তো আর এটা দেখা হয় নাই যে এটা ঠিক আছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘এটা কোনও আনুষ্ঠানিক পতাকা না। আর এটা কোথা থেকে আসছে তা আমরা কিছুই জানতাম না।’
তিনি জানান যে, এটা উদ্দেশ্যমূলক ছিল না। এটা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং অনুতপ্ত।
এরই মধ্যে তারা এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
‘এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা ভাইরাল করার কারণে মানুষ ভুল বুঝছে।’
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।❐