কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের ভ্যাকসিনেশনে শ্লথগতির দায় তাদের ইচ্ছার অভাব নয়
অ্যালেক্স স্যামুয়েলস
ভ্যাকসিনেশন বিষয়ে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যাবলি অসম্পূর্ণ হলেও তথ্যের একটি বিশেষ বিষয় বেশ উদ্বেগজনক। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় প্রায় স্থবির গতিতে টিকা গ্রহণ করছে। কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর মহামারীর প্রভাবের প্রকটতা অনুমান করতে এটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু এই ভ্যাকসিনেশনের পরিমাণের কারণ বুঝতে গিয়ে মানুষের ভুল ধারণাটাও লক্ষ্য করার বিষয়। অধিকাংশই চটজলদি চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলে নিজেদের অনাস্থা প্রকাশ করে ফেলে, কারণ মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গদের উপেক্ষা বা সক্রিয় দুর্ব্যবহারের এক লম্বা ইতিহাস রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ বছর মেয়াদি কুখ্যাত তুস্কেগি গবেষণা উল্লেখযোগ্য। এই গবেষণায় গবেষকরা সিফিলিসের প্রাকৃতিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের সিফিলিসের চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছিল।
অবশ্য সাম্প্রতিক পিউ সমীক্ষা থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের টিকা গ্রহণে দ্বিধার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। যে ৪২ শতাংশ গত নভেম্বরে টিকা নেওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন সেই প্রাপ্তবয়স্ক কৃষ্ণাঙ্গদের একটা বেশ বড় অংশ (৬১ শতাংশ) পিউকে জানিয়েছেন যে তারা কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার চিন্তা করেছেন অথবা ইতিমধ্যেই টিকা নিয়ে নিয়েছেন।
সমস্যা সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যই এখানে প্রতিফলিত হয়। ভ্যাকসিনের ওপর ভরসার অভাব ব্যাপারটা টিকাদানের হারের মধ্যকার বিশাল ব্যবধানের পুরোপুরি ব্যাখ্যা দেয় না। তাছাড়া ভ্যাকসিনে অবিশ্বাসের ওপর দায় চাপিয়ে দিলে চাপের প্রভাব ভ্যাকসিনেশনের জন্য থাকা কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর বর্তায় এবং সেটা ভ্যাকসিনেশনের হার কম হওয়ার প্রকৃত কারণকে ভুল পথে প্রবাহিত করে।
ওয়েস্ট হেলথ পলিসি সেন্টারের স্বাস্থ্যনীতি পরিচালক শ্যন ডিকসন বলেছেন, ‘কম করে বলতে গেলে, মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের অভিজ্ঞতা ভীষণ খারাপ। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গরা টিকা দিতে চায় না এই বিবরণীতে আমরা ভরসা করতে রাজি না।’ তিনি মনে করেন আসল বিষয়টা হল কৃষ্ণাঙ্গ কমিউনিটির জন্য ভ্যাকসিন বিতরণে বিনিয়োগের অভাব।
এনপিআরের একটি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লুইসিয়ানা, টেক্সাস এবং আলাবামায় প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিস্পানিক কমিউনিটির অনেক ভ্যাকসিন কেন্দ্র অনুপস্থিত ছিল, অথচ পাশের শ্বেতাঙ্গ কমিউনিটিতে হয়তোবা একটা কেন্দ্র অনুপস্থিত ছিল।
পিটসবার্গ স্কুল অফ ফার্মাসির সাথে একযোগে পরিচালিত একটি জাতীয় গবেষণায় ডিকসন দেখেছেন আটলান্টা, নিউ অরলিন্স এবং ডালাসের প্রায় দুই ডজন কাউন্টিতে কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে যেতে দীর্ঘ ড্রাইভিং দূরত্বের সম্মুখীন হয়েছে।
আমেরিকার প্রথম লকডাউনের বর্ষপূর্তির এ সময়ে আমরা বর্তমান ভ্যাকসিন রোলআউটে যে জাতি ও জাতিগত বৈষম্য দেখছি সেটা দূর করা সবচেয়ে জরুরী বিষয়।
তবে ডিকসন যেমন সতর্ক করেছেন, মূল সমস্যা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হওয়া উচিত এবং কৃষ্ণাঙ্গরা কেন কম দামে টিকা পাচ্ছে সেটা জানতে অসম্পূর্ণ ‘ভ্যাকসিন দ্বিধা বিবরণী’ ধরণের তথ্যে ভরসার বিষয়ে সাবধান থাকা উচিত। ‘দ্য … কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কম দামে ভ্যাকসিন পাবে বলে ধরে নিলে… শূন্যস্থান নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে’, ডিকসন জানান ‘যদি আমরা আমাদের অনুমানকে সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করে ফেলি, তাহলে আমরা সেটাকে সমস্যা মনে করে আর নিজেদের ওপর কোন দায় নিতে চাইব না।’❐
ভাষান্তর: জাহান আরা দোলন