নিউ ইয়র্কে মুক্তধারার বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে কবিতার মানুষ কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা
নিউ ইয়র্ক সংবাদদাতা : বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও জাতিসত্ত্বার কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কবিতা থেকে উঠে আসা দেশ। তাই কবিতার মতো রাষ্ট্র হবে বাংলাদেশ।’ তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭১ সালের সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকার্সের ময়দানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, ওটিই সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক কবিতা। ওটিই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা ঘোষণার ভাষণ। কোনো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্বপ্রণোদিতভাবে যে ভাষণটি দিয়েছিলেন, তা অবস্মরণীয়। তিনি আরো বলেন, আজ আমরা বিজয়রে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। কিন্তু আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন থেকেই বাংলাদেশের জন্ম শুরু।’
গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে নিউ ইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় শহরের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় নবান্ন পার্টি সেন্টারে। এই সভায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন চিত্রগ্রাহক লেয়ার লেভিনও অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। মুক্তির গান ডুকমেন্টারি চলচ্চিত্রের এই চিত্রগ্রাহক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে গণহত্যা দেখেছেন, তার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ভাষণ শেষে তিনি জয়বাংলা স্লোগান দিতে থাকলে সমবেতরা করতালি দিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সউদ চৌধুরী এবং সভা পরিচালনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিৎ সাহা। এছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লেখক ও প্রাবন্ধিক আহমেদ মাজহার। অনুষ্ঠানের শেষ সময়ে কয়েকজন প্রশ্ন করলে অতিথিরা জবাব দেন। এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করতে বিশেষ সহযোগিতা করে শাহ ফাউন্ডেশন।
বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক মুহাম্মদ নুরুল হুদা প্রবাসী লেখক পুরস্কার প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রবাসী বাঙালি লেখক বলতে কিছু নেই, ডায়াসপেরা বলতে কিছু নেই। বিশ্ব বাঙালি সত্য এবং বিশ্ব আমেরিকানও সত্য।’ তিনি বলেন, ‘এই বিশ্বায়নের যুগে বৈশ্বিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা চিন্তা করলে এসব কথা গ্রহণ করা যায় না। আমি এ ব্যাপারে কাজ করছি। তবে লেখক-কবিরা বাংলা একাডেমির যে কোনো পদক পেলে আরেকটি পাবেন না, তা কিন্তু নয়। সকল পদকের আলাদা সম্মান আছে। বাংলা একাডেমির নিয়ম অনুযায়ী লেখক-কবি-প্রাবন্ধিকরা পদক পেতে পারেন। কে, কোথায় বাস করছেন, সেটা বিবেচ্য নয়।’
মুহাম্মদ নুরুল হুদা লেয়ার লেভিন প্রসঙ্গে বলেন, ‘কবিতায় পুরোপুরি সময়, সমাজ বা একটি জাতির ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে মৌলিক ইতিহাস পাওয়া যায়। কিন্তু ক্যামেরার চোখ দিয়ে ইতিহাস দেখা যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন নাগরিক লেয়ার লেভিন ক্যামেরার চোখ দিয়ে আমাদের দেশ দেখেছেন, আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়েছেন, আমাদের কথা বিশ্ব দরবারে প্রমাণসহ তুলে ধরতে পেরেছেন। তিনি একজন সৃজনশীল চেতনার মানুষ। সৃষ্টি সত্ত্বা ভেতর থাকলে তা বেরিয়ে আসবেই। তিনি আমাদের কাছে সবসময় শ্রদ্ধেয়জন।’