ফিরে এলো সেই ‘মহা মুদ্রাস্ফীতির’ স্মৃতি
জীবনযাত্রার ব্যয় আকাশছোঁয়া। লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি। লাখো মানুষের চাকরি হারানো। ১৯৬৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এ পরিস্থিতি চলে।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই স্মৃতি।
গত শতাব্দীর ষাটের শেষ থেকে আশির দশকের শুরু পর্যন্ত ওই সময়টিকে অর্থনীতিবিদরা মনে রেখেছেন মহা মুদ্রাস্ফীতির কাল বলে। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকটি পার হয়ে আবার তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন তাদের কেউ কেউ।
মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি ঘাটতি, কর্মসংস্থানের সমস্যা, জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর নিত্যদিনের সংগ্রাম―এটি এই মুহূর্তে হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে পরিচিত চিত্র। তাই আবার পথে নেমেছে অনেক দেশের মানুষ।
গত এক সপ্তাহে আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, পাকিস্তান―এ রকম বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতিসহ অর্থনীতির সংকট এত দিন স্টক মার্কেটে সীমিত ছিল। এখন তার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে শেয়ারবাজারের বাইরে। প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বে কি একটি অর্থনৈতিক মন্দা আসন্ন? কত দিনই বা চলতে পারে তা?
পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে রিজার্ভ ব্যাংকগুলো মুদ্রাস্ফীতির রাশ টানার চেষ্টা করছে। এ জন্য তারা ঋণের সুদের হার বাড়াচ্ছে। বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশে এটি করা হয়েছে। অর্থনীতির সাধারণ হিসাবে সুদের হার বাড়লে ঋণ নেওয়ার ব্যয় বাড়ে। ব্যাংকগুলোকে এভাবে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হয়। ঋণ কমলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমে। মানুষের হাতে অর্থ কমলে তারা কম পণ্য কেনে। এভাবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়।
তবে কোনো কোনো দেশের জন্য সুদের হার বাড়ানো পূর্ণাঙ্গ সমাধান নয়। এমনকি কখনো কখনো তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
যুক্তরাজ্যে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটা ছিল ৯ শতাংশ। তা আরো খারাপ হতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলেছে, শরতের মধ্যে তা উঠতে পারে ১২ শতাংশে। এ মাসের গোড়ার দিকে তারা সুদের হার বাড়িয়েছে। তবে ব্রিটিশ শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বলছে, মুদ্রাস্ফীতি ঠেকানো যথেষ্ট হবে না। তারা বেতন বাড়ানোর দাবি করছে।
গত সপ্তাহান্তে ব্রিটিশ শ্রমিক ইউনিয়নগুলো ধর্মঘটে যায়। তারা কিছু তথ্য দিয়ে বলছে, ২০০৮ সালে ব্রিটিশ কর্মীরা ২৫ হাজার ডলারের মতো ক্ষতির শিকার হয়েছে। কারণ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে বেতন বাড়ার সামঞ্জস্য ছিল না। এ জন্য সরকারের কাছে দাবি উঠেছে আরো কিছু করার।
বিশ্বের ৫৩ জন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, সম্ভবত বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসছে। আগামী একটি বছর হবে কঠিন। ইউক্রেন যুদ্ধ এর এক নম্বর কারণ। তাতে খাদ্যপণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে সাপ্লাই চেইনে দেখা দিয়েছে বিঘ্ন।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতের অর্থনীতিতেও চাপের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে। রুপির দাম সর্বকালের নিচে।
সূত্র : উইঅন নিউজ