বিমান হামলায় খালাস পাওয়া শিখকে কানাডায় গুলি করে হত্যা
১৯৮৫ সালের এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে বোমা হামলার মামলায় খালাস পাওয়া রিপুদমন সিং মালিককে বৃহস্পতিবার কানাডায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, তারা এখনও হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতে কাজ করছে।
রিপুদমন সিং মালিক ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারেতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তাকে ও সহ-অভিযুক্ত আজাইব সিং বাগরিকে ২০০৫ সালে ১৯৮৫ সালের দুটি বোমা হামলা ও সংশ্লিষ্ট হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সম্পর্কিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছিল।
ওই হামলাগুলোতে ৩৩১ জন নিহত হয়েছিল।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি তিনটি গুলির শব্দ শোনার কথা বলেছেন। ওই ব্যক্তি মালিককে তার লাল টেসলা গাড়ি থেকে টেনে বের করেন। তখন তার ঘাড়ের একটি ক্ষত থেকে রক্তপাত হচ্ছিল। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী গুলির শিকার ব্যক্তিকে রিপুদমন সিং মালিক হিসেবে শনাক্ত করেছেন। তবে স্থানীয় পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতের নাম প্রকাশ করেনি।
পুলিশ বলেছে, ঘটনাস্থলে একটি ‘সন্দেহজনক গাড়ি’ পাওয়া গিয়েছে যাতে তখন আগুন জ্বলছিল।
এবিসি নিউজের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিচয় প্রকাশ করেনি। তবে মালিকের ছেলে জসপ্রীত তার বাবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বক্তব্য পোস্ট করার পরে এটি নিশ্চিত করেছে।
মালিকের ছেলে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মিডিয়া সবসময় তাকে এয়ার ইন্ডিয়া কনিষ্ক বোমা হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করবে। মিডিয়া এবং পুলিশ কখনই আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে বলে মনে হয় না। প্রার্থনা করি আজকের ট্র্যাজেডির সঙ্গে ওই হামলার ঘটনার যেন সম্পর্ক না থাকে। ’
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ ২৬৮ জন কানাডীয় ও ২৪ জন ভারতীয় নাগরিকসহ ৩২৯ জন আরোহীকে নিয়ে টরন্টো থেকে উড়েছিল। এর চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল মুম্বাই। বিমানটি আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরের আকাশে থাকার সময় সামনের কার্গো অংশে একটি সুটকেস বোমা বিস্ফোরিত হয়। এর পরিণতিতে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আরোহীদের সবাই মারা যায়।
জাপান থেকে উড্ডয়নের জন্য নির্ধারিত এয়ার ইন্ডিয়ার আরেকটি ফ্লাইটেও বোমা পাতার পরিকল্পনা ছিল। তবে টোকিওর নারিতা বিমানবন্দরে এটি আগেই বিস্ফোরিত হয়ে দুই বিমানবন্দরকর্মী নিহত হন।
সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালিকের মৃত্যুতে সারে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মালিকের বন্ধুরা বলছেন, তারা ‘শিখ সমপ্রদায়ের একজন নায়ককে হারিয়েছে’। আবার মালিকের সঙ্গে জানাশোনা থাকা ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী উজ্জল দোসাঞ্জ বলেছেন, ‘তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। ’
সিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামপ্রতিক বছরগুলিতে মালিক খালসা স্কুলের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ভ্যাঙ্কুভারভিত্তিক খালসা ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতিও ছিলেন।
বোমা তৈরিতে সাহায্য করা ও বিচারের সময় আদালতে মিথ্যা বলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে নন্দরজিত্ সিং রিয়াত নামে এক শিখ দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। রিয়াত ৩০ বছর কারাবন্দি ছিলেন। মিথ্যাচারের সাজার দুই-তৃতীয়াংশ কারাভোগ করার পর ২০১৬ সালে তিনি মুক্তি পান।
রিয়াত ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়া কনিষ্ক বোমা হামলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া একমাত্র ব্যক্তি। পাঞ্জাবের খালিস্তানি চরমপন্থীদের দমনে ১৯৮৪ সালে শিখ ধর্মের পবিত্র স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতে ওই বোমা হামলা চালানো হয়।
এনডিটিভি