শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ
গোতাবায়া রাজাপাকসের উত্তরসূরি নির্বাচনে আজ ভোট দেবেন শ্রীলংকার আইনপ্রণেতারা। বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসার সরে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পদে তিনজনের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন পার্লামেন্টের মহাসচিব। প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা ও ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) নেতা অনুরা কুমারা দেশনায়েকে ও এসএলপিপির এমপি দুল্লাস আলাহাপেরুমা। খবর ডেইলি মিরর ও সিলন টুডে।
খবরে বলা হয়, রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেন পার্লামেন্ট নেতা শ্রীলংকা পোদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) দিনেশ গুণাবর্ধনা ও সংসদ সদস্য মানুষা নানায়াক্কারা। আর অনুরা কুমারা দেশনায়েকেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন সংসদ সদস্য ভিজিথা হেরাথ ও ড. হরিণি আমারাসুরিয়া। এছাড়া দুল্লাস আলাহাপেরুমাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ও সংসদ সদস্য প্রফেসর জিএল পেইরিস।
এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যান সামাগি জানা বালাভিগায়ার (এসজেবি) প্রধান ও পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। গতকাল সকালে তিনি টুইট বার্তায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘দেশ ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণার্থে’ তিনি ও তার দল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সংসদের ভোটাভুটিতে আলাহাপেরুমাকে সমর্থন দেবেন। টুইটারে দেয়া ঘোষণায় তিনি আরো জানান, এসজেবি ও তার দলের জোট এবং অন্যান্য বিরোধী সহযোগীরা দুল্লাস আলাহাপেরুমার জয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করবে। বিকালে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে পার্লামেন্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাষ্ট্রপতি পদে না লড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রেমাদাসা।
বর্তমান পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দল শ্রীলংকা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)। শ্রীলংকার সংসদে মোট ২২৫টি আসনের মধ্যে এসএলপিপির সংসদ সদস্য সংখ্যা ১৪৫। ফলে এসএলপিপি সমর্থিত প্রার্থী রনিল বিক্রমাসিংহের দিকেই ভোটে জয়ের পাল্লা ভারী, যদিও তার নিজ দলের সংসদ সদস্য সংখ্যা মাত্র একজন।
এ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল থেকে শ্রীলংকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
দ্বিতীয় দফায় আন্দোলনের মুখে ১৪ জুলাই প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়েন গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার দেশ ছাড়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। তার আগে তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৯ জুন সংসদ সদস্যপদ ছাড়েন গোতাবায়ার ভাই বাসিল রাজাপাকসে এবং বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান মে মাসে। শ্রীলংকায় চলমান এ আন্দোলনের সূচনা গত এপ্রিলে। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল বামপন্থী দল ফ্রন্ট লাইন সোশ্যালিস্ট পার্টির (এফএলএসপি) ছাত্র সংগঠন রেভল্যুশনারি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
এদিকে রনিল বিক্রমাসিংহে প্রার্থী হওয়ায় ফের আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। শ্রীলংকার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট থেকে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হতে রনিল বিক্রমাসিংহের প্রত্যাশিত লড়াইয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দেশটির আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সদস্যরা।
৫৪ শতাংশ ছাড়ানো মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতির কারণে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে শ্রীলংকা।