মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলে ডেমোক্র্যাট শিবিরে স্বস্তি
হোয়াইট হাউজ এবং যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ডেমোক্র্যাটরা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য কয়েক মাসের কলহপ্রিয় প্রচারণার পর মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর পূর্বাভাস ছিল যে, রিপাবলিকান পার্টি বড় ধরনের জয় পেতে চলেছে। কিন্তু ভোটাররা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। ঐতিহাসিকভাবে, এই নির্বাচনগুলোর ফল হোয়াইট হাউজ নিয়ন্ত্রণে নেই—এমন দলের পক্ষে গিয়ে থাকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাংবাদিকদের ভাষ্য ছিল, রিপাবলিকানরা সহজেই এই বছর প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নেবেন। ঠিক যেমনটি তারা ২০১০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বিশাল কোনো ‘লাল ঢেউ’ নেই।
এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় রিপাবলিকান প্রার্থীরা শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী প্ল্যাটফরমে এবং মহিলাদের স্বাস্থ্য, প্রধানত গর্ভপাতের বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা মার্কিন নির্বাচনি প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা এবং গণতন্ত্র রক্ষায় জোর দেন। নির্বাচন খুবই হাড্ডাহাড্ডি হয়েছে এবং খুব সম্ভবত রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নিতে চলেছে।
মঙ্গলবার রাতে সারা দেশে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রথম বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের গণতন্ত্র পরীক্ষার মুখে পড়েছে। কিন্তু আমেরিকার জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, আমরা কারা। গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করছিলেন, এবারের নির্বাচনে বিশাল ‘লাল ঢেউ’ দেখা যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। তিনি বলেন, কিছু আসন আমরা হারিয়েছি। কিন্তু গত ৪০ বছরের মধ্যে যে কোনো ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায় প্রতিনিধি পরিষদে এবার আমরা কম আসন হারিয়েছি। ১৯৮৬ সালের পর গভর্নর নির্বাচনে এটি আমাদের সবচেয়ে ভালো মধ্যবর্তী নির্বাচন।
এখনো কিছু ফল আসতে বাকি থাকলেও এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রকৃতপক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরেছেন। রিপাবলিকানরা শেষ পর্যন্ত যদি একটি শিক্ষা নিয়ে থাকে, সেটি হলো—ভোটাররা ট্রাম্পের সমর্থনকে রাজনৈতিক বিষ বলে মনে করেন। ট্রাম্প-সমর্থিত ডক্টর মেহমেত ওজ এবং মার্কো রুবিওর মতো বড় মাপের প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনের রাতটি সত্যিই খারাপ ছিল।
মনে করা হচ্ছে যে, ট্রাম্পের পরিবর্তে রিপাবলিকান পার্টিতে আরও তরুণ কোনো নেতৃত্ব আসবে। যদিও তারা আরও বেশি রক্ষণশীল। ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস রিপাবলিকান ভোটারদের একটি বার্তা দিয়েছেন যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পথ ব্যর্থ।
নির্বাচনের পর্যবেক্ষকরাও যুক্তরাষ্ট্রের নারী ভোটারদের ক্ষমতা ও ক্ষোভকে অবমূল্যায়ন করেছেন। গর্ভপাতের অধিকার ইস্যুটি এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। সিএনএন ও এনবিসির জরিপে দেখা গেছে যে, মূল্যস্ফীতির পরে ভোটারদের কাছে গর্ভপাত দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল।
ডেমোক্র্যাটদের জন্য এটি ভালো নির্বাচন ছিল। কিন্তু রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নিলে বাইডেন ও তার দলকে আগামী দুই বছর সরকার চালাতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে প্রেসিডেন্টের এজেন্ডায় কাটছাঁট করতে হবে। রিপাবলিকানরা বাইডেন প্রশাসন ও তার পরিবারের বিষয়ে তদন্তেরও অঙ্গীকার করেছেন। তবে অনন্ত এই মুহূর্তের জন্য বাইডেন ও ডেমোক্র্যাটরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই পারেন।