ফিলিস্তিনি মানবাধিকারকর্মীকে ফ্রান্সে নির্বাসন দিল ইসরায়েল
‘সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য’ তকমা দিয়ে এক ফিলিস্তিনি মানবাধিকার আইনজীবীকে ফ্রান্সে নির্বাসন দিল ইসরায়েল। ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার হুমকি বিবেচনায় একজন ফিলিস্তিনি-ফরাসি মানবাধিকার আইনজীবীকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজ রোববার সকালে মানবাধিকারকর্মী সালাহ হামমুরিকে (৩৭) পুলিশ ফ্রান্সের একটি ফ্লাইটে তুলে দিয়েছে।
জেরুজালেমের আজীবন বাসিন্দা সালাহ। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এখন তাঁকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করছে। এমনকি জন্মস্থানে বসবাসের অধিকারও কেড়ে নিল তারা। অধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে। ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ বলেছে, সালাহ হামমুরিকে ফ্রান্সে নির্বাসিত করার ইসরায়েলি সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছে।
ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সালাহ ‘ইসরায়েলি নাগরিক এবং পরিচিত মুখদের’ বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী হামলা সংগঠিত, অনুপ্রাণিত ও পরিকল্পনা করেছিলেন’।
বিদায়ী ইসরায়েলি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আয়েলেত শেকত এই পদক্ষেপকে তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য বলে দাবি করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীর প্রতি সঠিক বিচার করা হয়েছে। তাঁকে ইসরায়েল থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছিল। এটি একটি অসাধারণ কৃতিত্ব যে আমি আমার দায়িত্ব শেষ হওয়ার ঠিক আগে তার নির্বাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমার হাতে থাকা সব কৌশল ব্যবহার করেছি।’
সালাহ হামমুরি তাঁর মায়ের মাধ্যমে ফরাসি নাগরিকত্ব পেয়েছেন। জেরুজালেমে বসবাসের আইনি অধিকার রয়েছে তাঁর। ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের এই বসবাসের অধিকার একটি ভঙ্গুর ব্যবস্থা। ইসরায়েল চাইলে যে কোনো সময় এ অধিকার প্রত্যাহার করতে পারে। সালাহ ইসরায়েলি পাসপোর্ট ব্যবহার করেন না।
ফিলিস্তিনি আইনি সহায়তা এবং বন্দীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংস্থা আদামিরে কাজ করেন সালাহ। ২০২১ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচটি ফিলিস্তিনি নাগরিক সংগঠনসহ এটিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে তালিকাভুক্ত করে।
২০০৫ সালে একজন চরমপন্থী ইহুদি রাব্বি ও রাজনৈতিক নেতাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সালাহকে ছয় বছরের জেল দেওয়া হয়। গত মার্চে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি সরকার। কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাঁকে তিন মাসের আটকাদেশ দেওয়া হয়। চার মাস আটক থাকার পর সালাহ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে চিঠি লিখে সাহায্য চান।
গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে অনশন শুরু করেন সালাহ। ১৯ দিন পর অনশন ভাঙেন। ওই সময় তাঁকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল। গত মাসে তাঁকে জানানো হয় বিনা বিচারেই তাঁকে নির্বাসনে পাঠানো হবে। চলতি মাসের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আপিল খারিজ করে দেয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সালাহর নির্বাসনের নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সালাহকে উচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে।