ঢাকার বাতাস বিপজ্জনক
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঢাকার বাতাস বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলে সব বয়সের মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গত এক সপ্তাহের তাৎক্ষণিক বায়ুমান সূচকের (একিউআই) তথ্য ঘেঁটে এমন ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে ঢাকার বাতাস অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং বিপজ্জনক পর্যায়ে থাকলেও দেশের সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায় থেকেই কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিপজ্জনক মাত্রায় দূষিত বায়ুর শহরে চলাফেরার জন্য যেসব নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার ও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, তার কিছুই অনুসরণ করছে না নগরবাসী। এ নিয়ে সচেতনতামূলক কোনো প্রচারণাও চালানো হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত বায়ুর কারণে প্রাথমিকভাবে অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে ফুসফুস, লিভার বা কিডনির ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
বায়ুর মান সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল, বেগুনি এবং খয়েরি রং ব্যবহার করে থাকে একিউআই। সবুজ রং দ্বারা ভালো, হলুদ রং দিয়ে মোটামুটি ভালো এবং কমলা রং দিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপের জন্য অস্বাস্থ্যকর বোঝানো হয়ে থাকে। একইভাবে লাল রং দ্বারা অস্বাস্থ্যকর, বেগুনি রং দিয়ে অতি অস্বাস্থ্যকর এবং খয়েরি রং দ্বারা বিপজ্জনক নির্দেশ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
গত শনি, রবি এবং সোমবার ঢাকার বাতাসের মান নিরূপণ করা হয়েছে বেগুনি রং দিয়ে, অর্থাৎ অতি অস্বাস্থ্যকর। একইভাবে গত মঙ্গলবারও ঢাকার বাতাসের মান নিরূপণ করা হয়েছে বেগুনি রং দিয়ে। আবার বৈশ্বিক বায়ুমান সূচকে বৃহস্পতিবার ঢাকাকে তৃতীয় সর্বোচ্চ দূষিত বায়ুর শহর হিসেবে দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দূষিত বাতাস ভারতের দিল্লীতে এবং দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের লাহোর।
চলতি মাসের শুরু থেকে ঢাকার বাতাস সব সময়ই অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর এবং বিপজ্জনক হিসেবে দেখিয়েছে একিউআই। একইসঙ্গে এই ধরনের বাতাসে চলাচলের জন্য কী ধরনের সতর্কতা বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে, তাও বাতলে দেওয়া হয়।
অতি অস্বাস্থ্যকর বাতাসে বাইরের চলাচল যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা, বাইরে ব্যায়াম না করা, বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান করা এবং ঘরের দরজা-জানালা সব সময় বন্ধ করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে এসব মানার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি পথচারীদের। আবার শিশু ও বয়স্ক মানুষের জন্য দূষিত বাতাস বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সরকারি কোনো দপ্তরের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় না কোনো ধরনের ব্যবস্থা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে অস্বাস্থ্যকর বাতাসে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমনটা দেখা যায় না।
এদিকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নরওয়েভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনআইএলইউ বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা ৫৮ শতাংশ, সড়কের ধুলা ১৮ শতাংশ, যানবাহনের ধোঁয়া ১০ শতাংশ, বায়োগ্যাস পোড়ানো ৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণ ৬ শতাংশ দায়ী বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণাটিতে। কিন্তু দূষণের এসব উৎস বন্ধ বা দূষণ কমাতে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বায়ুদূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি রোগাক্রান্ত হয় শিশুরা। ঢাকা শহরের দূষিত বায়ুর কারণে প্রাথমিকভাবে অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে ফুসফুস, লিভার বা কিডনির ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারি বলেন, ‘বাতাসের দূষণ কমানোর জন্য অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে গাড়ির কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়ন কাজে দূষণ রোধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু এটা সত্য যে, বাতাসের মান ভালো করা যাচ্ছে না। এই বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দপ্তরের সঙ্গে কাজ করছে।’