সোনা মজুতে আফগানিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভে সোনার মজুত বৃদ্ধি করছে। আপৎকালীন নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনায় অর্থ লগ্নির পথে ঝুঁকছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো। এসব দেশের রিজার্ভের বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে সোনা। কিন্তু উল্টোপথে হাঁটছে বাংলাদেশ। সোনার মজুতের বৈশ্বিক তালিকায় পেছনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে মজুত কম বাংলাদেশের।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শেষে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোনা মজুত রয়েছে সবচেয়ে বেশি।
বৈশ্বিক তালিকায়ও দেশটির অবস্থান নবম। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) মজুতে সোনা রয়েছে ৭৮৭ দশমিক ৪০ টন। রিজার্ভে সোনা মজুতে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ, তালিকায় ১১০ দেশের মধ্যে ৬৪তম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে সোনার পরিমাণ ১৪ দশমিক শূন্য ৩ টন। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোনা মজুতের পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৬৫ ও ২১ দশমিক ৮৭ টন। নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় এর পরিমাণ যথাক্রমে ৭ দশমিক ৯৯ ও শূন্য দশমিক ৪৭ টন।
ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে মূল্যবান ধাতুটির মজুত রয়েছে ৩৫ হাজার টনেরও বেশি। সব মিলিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত উত্তোলিত সোনার প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে। ২০২২ সালেও বিশ্বব্যাপী সোনার সবচেয়ে বড় নিট ক্রেতা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।
বর্তমানে পুরো বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনা মজুত সবচেয়ে বেশি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মজুতকৃত সোনার পরিমাণ ৮ হাজার ১৩৩ দশমিক ৪৬ টন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এর পরিমাণ ৩ হাজার ৩৫৫ দশমিক ১৪ টন। তালিকায় তৃতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে থাকা দেশগুলো হলো যথাক্রমে ইতালি (২ হাজার ৪৫১ দশমিক ৮৪ টন), ফ্রান্স (২ হাজার ৪৩৬ দশমিক ৭৫ টন) ও রাশিয়া (২ হাজার ২৯৮ দশমিক ৫৩ টন)। তালিকায় এরপর রয়েছে চীন (ষষ্ঠ, ২ হাজার ১০ দশমিক ৫১ টন), সুইজারল্যান্ড (সপ্তম, ১ হাজার ৪০ টন), জাপান (অষ্টম, ৮৪৫ দশমিক ৯৭ টন), ভারত (নবম, ৭৮৭ দশমিক ৪০ টন ও নেদারল্যান্ডস (দশম, ৬১২ দশমিক ৪৫ টন)।
ডব্লিউজিসির হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকেই বিশ্বব্যাপী ৪১২ টন সোনা কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে গত বছর ১ হাজার ২০০ টন সোনা বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। ষাটের দশকের বুলিয়ন মার্কেট বিপর্যয়ের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে এমন গতিতে সোনা কিনতে দেখা যায়নি। গত মে মাসে তুরস্ক এক ধাক্কায় ২০ টন সোনা কিনেছে। একইভাবে প্রতিবেশী ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের কাতারও এখন সোনা কেনা বাড়িয়েছে। মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তানের মোট রিজার্ভের দুই-তৃতীয়াংশ এখন সোনা।
কাজাখস্তানও এখন সোনা মজুত বাড়িয়ে দ্বিগুণে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন সোনা না কিনলেও বিদ্যমান মজুত ধরে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে। তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের সোনা রিজার্ভের পরিমাণ দেশটির মোট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ৭৮ শতাংশের সমান। জার্মানির ক্ষেত্রে এ হার ৭৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গাইডলাইন আছে। সে গাইডলাইন মেনে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা হয়। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটিও আছে। ওই কমিটি বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রিজার্ভ কীভাবে, কোন মুদ্রায় কতখানি ও কোথায় রাখবে, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এখনো বিপুল পরিমাণ সোনা মজুত আছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ মজুত বাড়ানোর দরকার মনে হলে সেটিও করা হবে।