মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আলোচনায় রাশিয়া-ভারত
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক বন্ধন দৃঢ় করা এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি করতে চায় ভারত ও রাশিয়া। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুই দেশের মন্ত্রীপর্যায়ে এ বিষয়ক আলোচনাও শুরু হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
অন্যদিকে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া খনিজ ও অন্যান্য সম্পদে সমৃদ্ধতম দেশ। রাশিয়ার কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য অবকাঠামোগত অবস্থাও ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মতো।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারত একদিকে যেমন বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, তেমনি এককভাবে বিশ্বের বৃহত্তম বাজারও। প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের বিশাল বাজার রয়েছে দেশটির।
সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম (এস.) জয়শঙ্কর এবং রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরভের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জয়শঙ্কর বলেন, ভারত এবং রাশিয়া উভয়ই দুই দেশে পারস্পরিক বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করা হলে এ ব্যাপারটি অনেক সহজ হবে এবং এই চুক্তির ব্যাপারেই রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছেন তিনি।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু পুরনো। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই এ সম্পর্কের শুরু। ওই সময় থেকেই ভারতে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি শুরু করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরও অটুট থাকে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এখনও ভারতের সবচেয়ে বড় সমরাস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্র-অংশীদাররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিলেও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ভারত এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘে এ পর্যন্ত যত রেজোল্যুশন পাস হয়েছে, সেসবের কোনোটিতে ভোটও দেয়নি ভারত।
বরং এই যুদ্ধ রাশিয়া ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে। সামরিক সরঞ্জামের পাশাপাশি এখন রাশিয়া ভারতের জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা। এই যুদ্ধের আগ পর্যন্ত ইরাক ছিল ভারতের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশ।
নয়াদিল্লিতে সোমবারের ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ডেনিস মান্তুরভও। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতীয় ভোক্তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে সেসব ভারতের বাজারে ছাড়তে চাই; আর এজন্য উভয় দেশের মধ্যে একটি বিস্তৃত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।’