আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলেন সু চি
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলার দ্বিতীয় দিনের শুরু হওয়া শুনানিতে মিয়ানমারে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলেন সু চি।তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে করা মামলাটি ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’। খবর এএফপি ও রয়টার্সের
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তার দেশের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ক্রমাগত আক্রমণ চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-আরসা। ২০১৭ সালের আগস্টে আরসা একটি সামরিক চৌকি ধ্বংস ও ৩০ জন পুলিশকে হত্যা করে। এভাবে তারা ১২টি হত্যাযজ্ঞ চালায়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী সশস্ত্র অভিযান চালায়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলার দ্বিতীয় দিনের শুরু হওয়া শুনানিতে মিয়ানমারে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলেন সু চি।তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে করা মামলাটি ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’।
তিনি বলেন, তার দেশের সেনাসদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচারব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। এটিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। তার দাবি, ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়। সেনাবাহিনী কোনো জেনোসাইড করলে সংবিধান অনুযায়ী মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা কোর্ট মার্শাল করে। সেই ধারবাহিকতায় ২৯ জন সেনা সদস্যসহ এক হাজার ৩২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আরও গভীর অনুসন্ধানের অনুরোধ করছি গাম্বিয়াকে। মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে মিয়ানমার সরকার মেনে নেবে না। আন্তর্জাতিক আইনের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থা অনেক দ্রুত।
অং সান সু চি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রধান বাসভূমি রাখাইন প্রদেশে গোলযোগের ইতিহাস কয়েক শতাব্দীর এবং এ সংঘাতকে আরও গভীর করতে পারে এমন কিছু না করতে আইসিজে’র প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সু চি বলেন, রাখাইনে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। মুসলমান শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি চালু করা হচ্ছে। তিনটি আইডিপি (ইন্টারন্যালি ডিসপ্লেসড পিপল) শিবির বন্ধ করা হয়েছে। মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশের বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ রকম অবস্থায় কীভাবে বলা হয় যে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে কার্যক্রম চলছে?
শুনানির প্রথম দিন মঙ্গলবার মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রতি আহ্বান জানায় গাম্বিয়া। বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ দিনের শুনানি শুরু হবে। তিন দিনের শুনানি শেষে কবে রায় ঘোষণা করা হবে সে বিষয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি।
‘ওয়ার্ল্ড কোর্ট’ বা বিশ্ব আদালত হিসেবে পরিচিত আইসিজেতে গত মাসে মামলা করে গাম্বিয়া। এতে কূটনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ওআইসি। শুনানি শুরুর আগের দিন সোমবার গাম্বিয়ার উদ্যোগকে সমর্থন দেয় কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।
তিন দিনব্যাপী শুনানি চলাকালে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইসিজে’র ওয়েবসাইটে (www.icj-cij.org) শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। সারা বিশ্বের গণমাধ্যমকর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ এই শুনানি দেখছেন।