করোনাভাইরাস বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক থাকার নির্দেশ
চীনের উহান থেকে সবর্ত্র ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস কোনভাবেই যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আরও সতর্ক থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে। চীন হয়ে যারা আসছেন, তাদেরকেও বিশেষভাকে দেখাশোনা করতে হবে।’
‘সবাইকে কেয়ারফুল থাকতে হবে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এবং পোর্টে স্পেশাল কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে আমাদের মধ্যে বিস্তার না ঘটতে পারে। চীন বা হংকং থেকে থেকে যেসব প্লেন আসবে সেগুলোতে বিশেষ নজর রাখতে হবে। চীনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হয় এমন পোর্টে বিশেষ নজর রাখতে হবে।’
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে ৮১ জনের প্রাণ, সংক্রমিত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষের দেহে।
২০০২ সালে সার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মতই একই পরিবারের সদস্য এ নভেল করোনাভাইরাস, যারা ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।
মধ্য চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে তাদের ধারণা, মানুষের দেহে এ রোগ এসেছে কোনও প্রাণী থেকে। তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।
এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতোই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি মোড় নিতে পারে নিউমোনিয়া, রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি অকার্যকারিতার দিকে। পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিচ্ছে।
এ ধরনের ভাইরাস যানবাহনের হাতল, দরজার নব, টেলিফোন রিসিভার ইত্যাদি সাধারণ বস্তু থেকেও ছড়াতে পারে। তাই বাইরে থেকে এসে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে৷ যারা হাসপাতাল বা ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন, তারা হাত পরিষ্কার করতে অ্যালকোহল স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
যেখানে-সেখানে প্রকাশ্যে থুতু-কফ ফেলা বন্ধ করার বিষয়ে সচেতনতা দরকার। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, যা অবশ্যই একবার ব্যবহারের পরই ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। হাত দিয়ে নাক মুখ চোখ স্পর্শ যত কম করা যায়, ততই ভালো।
বিদেশ থেকে আসা কোনও ব্যক্তি কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্তত ১৪ দিন তাকে বাড়িতে একটি আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।