কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নিয়ে ঢাকায় বর্ণাঢ্য আয়োজন
নিজস্ব প্রতিবেদক: মহান মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুদের স্মরণে ঢাকায় অনুষ্ঠান হয়ে গেল বর্ণাঢ্য এক আয়োজন। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। সেই আয়োজন সংশ্লিষ্টদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও ভালোবাসা জানানোই ছিল এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। নিউইয়র্কের ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম এবং ঢাকার বিজবন্ড আইটি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
‘একটি দেশের জন্য গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে অবিসংবাদিত এই নেতার প্রতি দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সম্মান জানানো হয় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি।
এরপর কনসার্ট ফর বাংলাদেশের ওপর ১৪ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। ঐতিহাসিক এই আয়োজনটি নিয়ে লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিন একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছেন। ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে যেটি প্রদর্শন করা হবে। অনুষ্ঠানে সেই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
জাদুঘরের মূল মিলনায়তনটি পূর্ণ ছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়ে। প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কে মুজিব নগর সরকারের প্রথম কূটনীতিক আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।
আরও ছিলেন লেখক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার সুভাষ সিংহ রায় ও নিউইয়র্ক প্রবাসী চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার। ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডমের সমন্বয়কারি শামীম আল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজবন্ড আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ। সঞ্চালনা করেন একাত্তর টিভির উপস্থাপক নাজনীন মুন্নী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরিতে তারা কি করেছেন, তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। কনসার্ট ফর বাংলাদেশে, তার প্রভাব এবং গোটা আয়োজন সম্পর্কেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সেই সময় এই আয়োজনটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বড় একটি প্রেরণাদায়ী ভূমিকা রেখেছে।’ এ নিয়ে উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের নিয়ে আলাদা আলাদা কাজ হওয়া জরুরি। বিদেশী অনেক বন্ধুও ছিলেন পাশে। কনসার্ট ফর বাংলাদেশ তেমনি একটি জোরাল উদ্যোগ ছিল। অসাধারণ সেই আয়োজনটি নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় শামীম আল আমিনকে ধন্যবাদ।’
শামীম আল আমিন বলেন,’আমি অনেক দূরে প্রবাসে থাকি। কিন্তু দেশ সবসময়ই থাকে আমার হৃদয়ে। সব সময়ই এক ধরণের তাগিদ অনুভব করি। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের একটি চমৎকার অধ্যায়কে সবার সামনে আনার চেষ্টা করছি। সে কারণেই কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের এই উদ্যোগ। কেবল তাই নয়। ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডমের ব্যানারে আমরা বিদেশী অনেক বন্ধুকে নিয়ে কাজ করবো।’
অনুষ্ঠানের পরের পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, শিল্পী বাবু সরকার, বাপকা বেটা সঙ্গীত দলের শুভাশীষ ভৌমিক ও ঋতুরাজ ভৌমিক এবং অপর্ণা আমিন।
আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী অভ্র ভট্টাচার্য। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের গানে গোটা মিলনায়তনে তখন অপূর্ব এক পরিবেশ তৈরি হয়।