নিউ ইয়র্কে করোনায় মৃত্যু: চিকিৎসক ও নার্সেরা বাকহারা
যুক্তরাষ্ট্র আবারও করোনাভাইরাসে একদিনের মৃত্যুর রেকর্ড করেছে। রেকর্ড করেছে নিউ ইয়র্কও। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে ১ হাজার ৯৪০ জন মানুষ। এর প্রায় অর্ধেকই নিউ ইয়র্কে, ৭৭৯ জন।
আক্রান্তদের মৃত্যু আর শারীরিক অবস্থার অবনতি এতটাই দ্রুত ঘটছে, যা দেখে সেখানকার চিকিৎসক ও নার্সেরা বাকহারা হয়ে গেছেন।
নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫১ হাজার ১৭১ জন। মৃত্যুর সংখ্যার সরকারি হিসেবে সব তথ্য উঠে আসছে না বলে জানিয়েছেন দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কেননা বাড়িতে বসে যেসব রোগী মারা যাচ্ছেন, এই হিসাবে তাদের হিসেব গণনায় ধরা হচ্ছে না।
নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কিউমো বলেন, প্রতিটি নম্বর একেকটি মুখমণ্ডল। মারা যাওয়া লোকজনের স্মরণে রাজ্য জুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে অনুরোধ করেন তিনি।
কিউমো বলেন, এই ভাইরাস ঝুঁকিপূর্ণদের আক্রান্ত করে, দুর্বলদের আক্রান্ত করে। বিপন্নদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের সামাজিক কর্তব্য।
চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, বয়ষ্ক ও আগে থেকে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় থাকা রোগীরাই কেবল ঝুঁকিতে না, তরুণ ও স্বাস্থ্যবানরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক শহরের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের নার্স ডিয়ানা টরিস বলেন, দেখতে ভালো মনে হচ্ছে, ভালো বোধ করছেন, অন্যদের দেখে এমন রোগীদের কাছে ফিরে আসার পর আর তাদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমার মানসিকভাবে বিকল হয়ে পড়ার অবস্থা হয়েছে। তাদের কক্ষের বাইরে পা দিতেই আতঙ্ক বোধ করছি।
যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৪৩ লক্ষ ৪ হাজার ৯২৭ জন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ১৪ হাজার ৭৮৮ জন মারা গেছেন।
পরপর একটানা দুদিন ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১ হাজার ৯০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে।
গভর্নর কিউমো বলেন, তার রাজ্যে গতকাল ৭৭৯ জন মারা গেছেন। আর নিউ জার্সিতে মৃত্যু হয়েছে ২৭৫ জনের। মৃত্যুর এই দুটো হিসাবেই আগের দিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
এই নির্মম পরিসংখ্যানের পরেও নিউইয়র্ক গভর্নরের দাবি, তার রাজ্যের সার্বিক প্রবণতা ইতিবাচক। হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমছে।
সংক্রমণের হারের ওপরও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের যে ৪২টি রাজ্যে ‘ঘরের থাকার নির্দেশ’ জারি করা হয়েছে, নিউইয়র্ক তাদের একটি। এসব জায়গার সব অপ্রয়োজনীয় কর্মস্থানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ছোঁয়াচে রোগ নিয়ন্ত্রণে এমন পদক্ষেপ আবশ্যিক বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করলেও এতে মার্কিন অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে।
লোকজনকে ব্যাপকহারে বেকারত্বে দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিটে বড় পরিবর্তনের পাশাপাশি মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দারও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
কিউমো বলেন, প্রাণহানি অব্যাহত থাকবে কিংবা আসছে দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।
ভেন্টিলেটরে যুক্ত হওয়ার পর রোগীদের মধ্যে যাদের স্বাস্থ্য আশঙ্কাজনক, তারা মারা যাচ্ছেন। করোনায় মৃত্যুর হিসেবে ইটালির পরেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশই নিউ ইয়র্ক শহরে হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সপ্তাহে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, আমরা এ সপ্তাহে নিজেদের হৃদ যন্ত্রণার মাঝে রয়েছি। তবে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।◉
রয়টার্স