কুরবানি মানে শুধু পশু বলি নয়
কাউসার হোসেন সুইট
কুরবানি মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানব সভ্যতার মহান ত্যাগ। যদিও অনেকে পশুহত্যার মহোৎসব বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তর্কের খাতিরে তর্ক না করে বরং এখানে থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। যে শিক্ষা মানবকূলকে প্রীতিবন্ধনে আবদ্ধ করে, দুঃস্থের প্রতি বিত্তের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে, আত্মাীয়তার বন্ধনকে সুদৃঢ় করে, দাতা-গ্রহীতার সম্মান বৃদ্ধির মাধ্যম্যে ব্যক্তি ও পরিবারকে সমুজ্জ্বল করে, সর্বোপরি বিশ্বাসীদের জন্য স্রষ্টার বিধান বা হুকুম মান্য করার সু্যোগ সৃষ্টি করে।
কুরবানিকৃত পশুর গোস্ত রক্ত চামড়া হাড়- এগুলোর কিছুই স্রষ্টার কাছে পৌঁছায় না। পৌঁছায় শুধু নিয়ত। অর্থাৎ চিন্তাচেতনা। সৎ চিন্তা জীবনধারাকে উজ্জীবিত করে। পারপার্শ্বিক সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটায়। মনের সমস্ত কু-খায়েশকে দমন করাই কুরবানির আসল মাহাত্ম। পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতায় ধারবাহিক নিয়মতান্ত্রিকতা সেই শিক্ষাই প্রদান করে।
মুসলিম জাতির জনক এবং নবী হযরত (আ.) স্বপ্নে দেখলেন মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাকে বলছেন, তোমার সবচাইতে প্রিয় বস্তু আমার নামে কুরবানি কর। ইব্রাহিম (আ.) একশ’ উট কুরবানি করলেন। কিন্তু এরপরও একই স্বপ্ন আবার দেখলেন। তিনি বুঝতে পারলেন আল্লাহ তাঁকে তার সম্তানকে কুরবানি করতে বলছেন। তখন তিনি তার শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)- এর সঙ্গে স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা করলেন। ইসমাইল (আ.) তখন তারে আল্লাহর নির্দেশ পালনের পরামর্শ দিলেন।
ইব্রাহিম (আ.) নিজ সন্তানকে কুরবানি করতে উদ্যত হলেন। অদৃশ্য কন্ঠে ভেসে এল, ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর।’
তিনি চোখে মেলে দেখতে পেলেন, ইসমাইলের পরিবর্তে দুম্বা কুরবানি হয়ে আছে। তিনি বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু, ওয়াল্লাহু আকবর।’
বালক ইসমাইল বললেন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’
সেই থেকে হ্জ্ব মৌসুমে প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানের জন্যে কুরবানি ফরজ হয়ে গেল। এবং তাকবিরে তাহরিমা বেঁধে দেওয়া হলো, ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লালাহু, ওয়াল্লাহু আকবর। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ যা কুরবানির সময় মুসলমান মাত্রকেই বলতে হবে। সেই সঙ্গে মহান আল্লাহ তা’য়ালা কুরবানির কিছু বিধান দিয়ে দিলেন। সেগুলো প্রত্যেক মুসলমানকেই মান্য করতে হয়। ❑
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট