কেন চীন সফরে যাচ্ছেন ব্লিনকেন?
দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিক্ততা চলছে চীনের। চলতি বছর তথাকথিত ‘নজরদারি বেলুন’ ইস্যুকে ঘিরে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে এই তিক্ততা।
এই পরিস্থিতেই চীনে সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন। রোববার রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।
তার এই সফরের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর মার্কিন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার পা পড়বে বেইজিংয়ের ভূমিতে। এর আগে ২০১৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) তৎকালীন প্রধান মাইক পম্পেও। ওই সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন পম্পেও।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে এই প্রথম কোনো উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তা চীন সফরে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে— এই সফরে চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং কিংবা দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। তবে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হবে কিনা— তা এখনও অনিশ্চিত।
কিন্তু ঠিক কী কারণে দু’দেশের মধ্যে তিক্ততা চরম রূপ নেওয়া সত্ত্বেও বেইজিং সফরে যাচ্ছেন ব্লিনকেন? যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগারীয় অঞ্চল বিভাগের প্রতিনিধি ড্যানিয়েল ক্রিটেনবিঙ্ক এ প্রশ্নের উত্তরে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে যেসব ‘ভুল বোঝাবুঝির’ সৃষ্টি হয়েছে, সেসব দূর করতে যথাযথ একটি কার্যকর ‘যোগাযোগ চ্যানেল’ গঠনের প্রস্তাব বেইজিংকে দেওয়াই ব্লিনকেনের এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য। কারণ যদি একটি কার্যকর যোগাযোগ চ্যানেল দুই দেশের মধ্যে না থাকে, সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের এ দুই ‘সুপার পাওয়ার’ শক্তির সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঘোর আশঙ্কা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই আশঙ্কাকে একেবারে অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো উপায় নেই। বিশেষ করে বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে।
এই গত মাসেই দক্ষিণ চীন সাগরের আন্তর্জাতিক এয়ার স্পেস এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি নজরদারি উড়োজাহাজের সঙ্গে প্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে যাচ্ছিল; পরে শেষ মুহূর্তে বিমান চালকদের ব্যাপক চেষ্টায় সেই দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে। পরে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড এ সম্পর্কিত এক বিৃবতিতে বলেছে, চীনা বিমানচালকের ‘অপ্রয়োজনীয় বেপরোয়া’ বিমান চালনাই সেই ঘটনার জন্য দায়ী।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা অবশ্য গত মাসের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা বলতে নারাজ। তাদের মতে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় থেকে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্ট যে দ্বন্দ্ব বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ও অব্যাহত রয়েছে, গত মাসে দুই দেশের বিমানের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা।
তবে মার্কিন থিংকট্যাংক সংস্থা ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের জেষ্ঠ্য বিশ্লেষক রায়ান হাস মনে করেন, বেইজিং এবং ওয়াশিংটন উভয়ই তাদের মধ্যকার কূটনৈতিক তিক্ততা ও স্থবিরতার অবসান চায়। অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সফরকে উভয় দেশের এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ‘প্রাথমিক পর্যায়’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
আলজাজিরাকে রায়ান হাস বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং প্রেসিডেন্ট শি’— উভয়ই ভালোভাবে জানেন যে এই দ্বন্দ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র বা চীন— কেউই লাভবান হবে না। আবার একই সঙ্গে, বন্ধুত্বের হাত কে প্রথম বাড়িয়ে দেবেন— তা নিয়েও দ্বিধা রয়েছে দু’জনের মনে।’
‘তাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর হলো দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার প্রক্রিয়ায় প্রবেশের একটি সুযোগ। অবশ্য আমরা এখনও জানিনা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতা বজায় রাখা দুই দেশ এই সুযোগ গ্রহণ করবে কিনা। অনাগত সময়ই তা বলতে পারে।’