ক্লান্তিহীন পথিক জগলুল হায়দার
ছড়াকার জগলুল হায়দার সৃষ্টি করেছেন উত্তরাধুনিক ছড়া। কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন, মডার্নিজমের মাধ্যমে কলুষিত করা সমাজকে জগলুল হায়দার ছড়ার মাধ্যমে কষাঘাত করেন। বাংলা ভাষার ছড়া সাহিত্যের অন্যতম ও অনিবার্য এই ছড়াকার জন্মেছেন ১৯৬৫ সালে। আজ ৮ অক্টোবর ছড়াকা জগলুল হায়দারের ৫৫তম জন্মদিন আজ। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন ছড়াকার, কার্টুনিস্ট ও বাংলা শিশুসাহিত্যক
শেখ তোফাজ্জল হোসেন
ছড়াসাহিত্যে এখন দিগন্তবিসারি পথ চলায় লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম প্রমুখের পরবর্তীকালে আরেক প্রতিভা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি জগলুল হায়দার। মধ্যবয়সেই তাঁর প্রতিভার পূর্ণ সন্ধান মেলে তাঁর ছড়াগ্রন্থ ‘জগলুল সমগ্র’ এর মাধ্যমে। আমরা তাঁর যাত্রাপথে পাশেই দর্শক ছিলাম। তাঁকে যতটা জানি অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী এবং বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাঁর লেখা অনেক কথা বলে। পাশের ঝুপড়ি ঘরও বাদ যায় না। খুব বেশি গভীরতা নিয়ে এগোন না, তবে শেষ পর্যন্ত তিনি এক দার্শনিক ছড়াকার। তাঁর দর্শন আমাদের ভাবায়।
আমি তাঁর অনেকগুলো বই বা ছড়া পড়ার সুযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যেই তিনি ছড়ায় অবদানের জন্য সংবর্ধিত হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে অনেক আগেই সংকলন বেরিয়েছে। যার মধ্যে তিনি আছেন গোপনে, বহিরঙ্গে তাঁর ছাপ আমরা দেখতে পাই। ছড়া লিখে তিনি অল্প সময়ে এতটা প্রশংসিত হয়েছেন যে নতুন করে প্রশংসার বেশি কিছু নাই।
জগলুল হায়দার ইতোমধ্যেই ছড়াসাহিত্যে যেমন জনপ্রিয় হয়েছেন, তেমনি ছড়ার নতুন দিগন্ত আবিষ্কার করে চলেছেন। আমরা শুধু বসে বসে দেখছি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি নিজেই। খুঁজলে তাঁর ছড়ায় এই বহুগামিতা লক্ষ্য লক্ষ্য করা যায়- তিনি ছন্দের রূপকার, তিনি শব্দের রূপকার। শব্দের হাত ধরে চিত্রধর্মী বয়ানের মাধ্যমে তাঁর ছড়া কথা কয়ে ওঠে। সে কথা বুড়ো-গুঁড়ো সকলের মন ছুঁয়ে যায়; উদ্ধৃতি বাহুল্য।
জগলুল হায়দার এখনও পথ চলছেন। বাকি সময়টায় তিনি আরও সৃষ্টিশীল থাকবেন এবং ছোটদের ও বড়দের জন্য নতুন করে ছড়াসাহিত্য সাজাবেন। মূল্যায়নের সময় এখনও আসে নি, আরও পথ চলবেন তিনি। তবে এটুকু বলা যায় ছড়াসাহিত্যে তিনি ইতোমধ্যেই একটি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। এই ক্লান্তিহীন পথিককে সাধুবাদ জানাই। তাঁর দীর্ঘ পথ চলা কামনা করি।
লেখক: ছড়াকার, কার্টুনিস্ট ও বাংলা শিশুসাহিত্যক।